Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বেতন ছাড়াই পুজো চলছে, ক্ষোভ কর্মীদের

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরোলেও জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মীরা। এতে রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহনদেবের মন্দির-সহ অন্য মন্দিরের দেবোত্তরের কর্মীদের একাংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরোলেও জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মীরা। এতে রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহনদেবের মন্দির-সহ অন্য মন্দিরের দেবোত্তরের কর্মীদের একাংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, কবে তাঁদের বেতন হবে সে ব্যাপারেও প্রশাসন বা ট্রাস্ট কর্তারা স্পষ্ট করে জানাতে পারছেন না। ফলে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য দৈনন্দিন পুজো চালু রেখেই আন্দোলনের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। দেবোত্তর সূত্রের খবর, অন্য মাসের মতো ডিসেম্বর মাসেও সবাই ১ তারিখে নভেম্বরের বেতন পান। ডিসেম্বর মাস থেকে সময় মতো বরাদ্দ না মেলায় বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

অভিযোগ, প্রশাসন বা ট্রাস্ট বোর্ডের কর্তাদের আর্জি জানালেও লাভ হচ্ছে না। ফলে সংসার চালাতে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি পি উল্গানাথন বলেছেন, “পর্যটন দফতরের বরাদ্দে ওই কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই কর্মীরা বেতন পেয়ে যাবেন।”

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, বোর্ডের আওতাধীন ২২টি মন্দির ছাড়াও একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পর্যটক আবাস রয়েছে। তালিকায় কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির ছাড়াও ডাঙ্গোরাই মন্দির, রাজমাতা মন্দির থেকে বৃন্দাবন ও বেনারসের মন্দিরও রয়েছে। কোচবিহারের রাজাদের আমলেই ওই সব মন্দির তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে সে সব দেবোত্তরের মালিকানাধীন হয়। করণিক, পুরোহিত, প্রহরী, বলিকারক, মালি থেকে ভোগের প্রসাদ তৈরির মতো বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে আছেন ১৫৪ জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৫৮ জন। অস্থায়ী কর্মী আছেন ৯৬ জন। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৪০ জন কর্মী আছেন মদনমোহন মন্দিরে। ফি মাসে ওই কর্মীদের বেতন বাবদ দরকার হয় ১৭ লক্ষ টাকা। দেবোত্তর কর্মচারী সমিতির সভাপতি হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে জানুয়ারির বকেয়া বেতন মেটানো হবে বলে বোর্ডের কর্তারা আশ্বস্ত করেছেন। সমস্যা না মেটানো হলে স্মারকলিপি, বিক্ষোভের মতো আন্দোলনের ব্যাপারেও ভাবতে হবে। তবে বাসিন্দাদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে সব মন্দিরেই প্রতিদিনই পুজো চলবে।”

কিন্তু বরাদ্দ নিয়ে কেন এমন সমস্যা? দেবোত্তর সূত্রের খবর, কর্মীদের বেতনের জন্য বছরে ২ কোটি টাকার বেশি দরকার হয়। দীর্ঘ দিন থেকে রাজ্য পর্যটন দফতর বছরে তিনটি কিস্তিতে ওই টাকা মেটায়। এপ্রিল, জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে ওই বরাদ্দ দেওয়া হতো। নভেম্বর মাস পর্যন্ত বরাদ্দ থাকায় বেতন নিয়ে সমস্যা হয়নি। গত ডিসেম্বরে কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু করে পর্যটন দফতর। বরাদ্দ স্থগিত করে দেওয়া হয়। বোর্ডের এক কর্মী জানান, দেবোত্তরের আওতাধীন মদনমোহন মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কত জন কর্মী আছেন, তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য যাচাইয়ের জন্য চাওয়া হয়। সে সব তথ্য পাঠানোও হয়।

তার পরেও জানুয়ারিতে স্রেফ ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার থেকে ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে ডিসেম্বরের বকেয়া বেতন মেটানো হয়। নতুন করে বরাদ্দ না মেলায় জানুয়ারির বেতন আর মেটানো যাচ্ছে না। দেবোত্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ৮৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ওই টাকা পেলে মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন নিয়ে সমস্যা থাকবে না। পর্যটন দফতরের কর্তারা দ্রুত বরাদ্দ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। দেবোত্তর কর্মচারা সমিতির কোষাধ্যক্ষ দীনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যেরও আশা শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE