শিলিগুড়ির সিপি জগমোহনকে (বাঁ দিকে) ঘটনার কথা জানাচ্ছেন আক্রান্ত পুলিশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
অটো চালকের হাতে আক্রান্ত হলেন কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার। পথচারীদের সামনেই তাঁকে রড দিয়ে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের সেবক মোড়ে। উত্তম বৈশ্য নামে ওই পুলিশ অফিসারের মাথায় চোট লেগেছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার পরে এ দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাঁকে বিশ্রামে থেকে সিটি স্ক্যান করাতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। অভিযুক্ত অটো চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত মদন সরকারের বাড়ি শহরের চম্পাসারির বটতলায়। ওই চালকের বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীকে খুনের চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই অটোর নথিপত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। করও জমা দেওয়া হয়নি।
খাস কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে অটো দৌরাত্ম্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। বাড়তি যাত্রী তোলা থেকে বেপরোয়া ভাবে অটো চালানো, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে লোক ওঠানো-নামানো-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে অটো চালকদের বিরুদ্ধে। বেপরোয়া ভাবে অটো চালানোর জেরে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। শিলিগুড়ির সিটি অটোর চালকদের বিরুদ্ধেও অতীতে নানা অভিযোগ উঠেছে। অটোয় এক কিশোরীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগও উঠেছিল চালকের বিরুদ্ধে।
এ দিন সেবক রোডের ঘটনার পর এলাকায় গিয়েছিলেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর কাছে অটো দৌরাত্ম্য নিয়ে নানা অভিযোগ জানান। পুলিশ কমিশনার পরে বলেন, “অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। শহরবাসীদের সিটি অটো নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ পাওয়া দরকার। তা হলে তদন্তের সুবিধা হয়। তবুও আমরা সব অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।” সিটি অটো ওনার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষের বক্তব্য, “কোনও অপরাধমূলক ঘটনাকে সমর্থন করি না। বেপরোয়া অটো চালালে পুলিশ যেন কড়া ব্যবস্থা নেয়।”
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দু’টো নাগাদ চম্পাসারি-কোর্ট মোড় রুটের অটোটি সেবক মোড়ে গিয়ে ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়ায়। সিগনালে সবুজ আলো জ্বলার পরেও অটো চালক যাত্রী তুলছিলেন। পুলিশ বারবার ইশারা করলেও চালক গুরুত্ব দেননি। তখনই ওই এলাকায় কর্তব্যরত এসএসআই উত্তমবাবু অটোটির কাছে এসে নথিপত্র দেখতে চান। কেন কর দেওয়া হয়নি, কেনই বা চালকের কাছে মালিকের দেওয়ার অনুমতিপত্র নেই, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। অভিযোগ, তখনই চালক অটোয় থাকা একটি রড নিয়ে উত্তমবাবুর মাথায় আঘাত করেন। দ্বিতীয় বার রড নিয়ে অটো চালক ওই পুলিশ অফিসারের উপর ঝাঁপালে আশপাশের লোকজন তাঁকে জাপটে ধরেন। ইতিমধ্যে অন্য ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা এসে উত্তমবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। শিলিগুড়ির ট্রাফিকের ওই এলাকার ওসি ভবেন রায় বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। আমরা ধৃতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে মামলার সুপারিশ করেছি।”
অটোর মালিকের নাম মৃণাল ভৌমিক। তিনিও চম্পাসারির বাসিন্দা। মৃণালবাবু বলেন, “অভিযুক্ত মদন আমার বাড়ির কাছেই থাকে। এক মাস হল আমার অটো চালাচ্ছে। এমন ঘটবে বুঝতে পারিনি।” অটোর নথিপত্র ঠিক নেই কেন? মৃণালবাবু জানান নথি দেখে জবাব দেবেন তিনি। পুলিশের দাবি, ধৃত চালক জেরায় কবুল করেছেন, মাথা-গরম করে সে ওই কাজ করে ফেলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy