Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসায় এক দিনে ক্ষতি দশ কোটির

শহরে কার্নিভাল। তাই সোমবার দুপুর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শিলিগুড়িতে ঢোকার প্রধান সড়ক। তাই এদিন দুপুরের পর পাহাড়, ডুয়ার্স, বিহার সহ বাইরের কোনও গাড়িই ঢুকতে পারেনি। ফলে শহরের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে। ব্যবসায়ী সংগঠনের আশঙ্কা, একদিন লেনদেন ঠিকঠাক না হওয়ায় অন্তত ১০ কোটি টাকার ব্যবসা মার খেয়েছে। তাঁদের অনেকেই এদিন কার্নিভাল কমিটির পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কখন ফিরব বাড়ি? যানজটে থমকে থাকা স্কুলপড়ুয়াদের চোখেমুখে যেন সেই প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র।

কখন ফিরব বাড়ি? যানজটে থমকে থাকা স্কুলপড়ুয়াদের চোখেমুখে যেন সেই প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

শহরে কার্নিভাল। তাই সোমবার দুপুর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শিলিগুড়িতে ঢোকার প্রধান সড়ক। তাই এদিন দুপুরের পর পাহাড়, ডুয়ার্স, বিহার সহ বাইরের কোনও গাড়িই ঢুকতে পারেনি। ফলে শহরের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে।

ব্যবসায়ী সংগঠনের আশঙ্কা, একদিন লেনদেন ঠিকঠাক না হওয়ায় অন্তত ১০ কোটি টাকার ব্যবসা মার খেয়েছে। তাঁদের অনেকেই এদিন কার্নিভাল কমিটির পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকেরই মত, ছুটির দিনে বা কাজের সময় বাদ দিয়ে এই ধরণের মিছিল বা পদযাত্রা করলে ব্যবসায় এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হতো না। তাতে কার্নিভালের সঙ্গে সকলের যোগাযোগ গড়ে উঠত। শিলিগুড়ি মোটর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি বিনয় গুলাটি বলেন, “এমনিতেই এখন ব্যবসা মন্দা। তার উপরে এভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হলে ব্যবসাই করা যাবে না। ছুটির দিনে বা রবিবার মিছিল হলে ভাল হতো।”

এ দিন দুপুর দু’টোর সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে থেকে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। পূর্ব ঘোষণা মত দুপুর ১২টা থেকেই শহরের প্রধান দুটো রাস্তার একদিক আটকে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মিছিল শুরু হয় সাড়ে তিনটেয়। শেষ হয় সাড়ে চারটের পর। ফলে দীর্ঘ সময় জুড়ে থমকে থাকে এই দু’টি রাস্তা। দিনের মূল সময়টাই এ ভাবে নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

শিলিগুড়ি হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে প্রায় চারশো ব্যবসায়ী রয়েছে। সহ সভাপতি প্রদ্যুম্ন সিংহ চহ্বান বলেন, “মিছিলের জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ব্যবসা পাহাড় ও বাইরের ক্রেতাদের উপরে নির্ভর করে। তারা দুপুর থেকে শহরে ঢুকতেই পারেননি। ফলে এদিন আমাদের অনেক ব্যবসায়ীই একটা মালও বিক্রি করতে পারেননি।” ফোসিনের পক্ষ থেকেও এদিনের ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ দাস বলেন, “মানুষের অসুবিধা করে মিছিল করায় আমার সমর্থন নেই। ব্যবসা বাঁচিয়ে করা উচিত ছিল।”

ঘটনাচক্রে, মিছিলে যাঁরা পা মিলিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই নাগরিকদের হয়রানি, ব্যবসার ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যেমন, শিলিগুড়ি ভেটারেন প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কালু চন্দ বলেন, “কার্নিভাল কমিটি কী ব্যবস্থা করেছে তা জানি না। আমাদের ডাকা হয়েছিল, আমরা মিছিলের ভিতরের দিকে ছিলাম। বাকি বিষয়টি বলতে পারব না।” শিলিগুড়ি জেলা খোখো অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভাস্কর দত্ত মজুমদার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দার্জিলিং জেলা তৃণমূল শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক জয়ন্ত করও মন্তব্য করতে চাননি। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা জেলা কাবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নান্টু পাল বলেন, “দুর্ভোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।”

তবে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন স্বীকার করেছেন, সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের সমস্যা হয়েছে। যেমন, হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সভাপতি শঙ্কর মজুমদার বলেন, “মিছিলের ফলে মানুষের যথেষ্ট হয়রানি হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনা করলেই এই যানজট এড়ানো যেত। হিলকার্ট রোডের সমান্তরাল রাস্তা রয়েছে। সেটি ব্যবহার করলেই সমস্যা এতটা ঘনীভূত হত না। মাটিগাড়া, শালবাড়ি পর্যন্ত গাড়ি দাঁড়াত না।”

নিত্যযাত্রীরা কী বলছেন? সুবীর কুণ্ডু একটি ক্যুরিয়র সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, “সময় মত মাল ডেলিভারি দিতে না পারলে হাজার ররকম কৈফিয়ত দিতে হবে। সরকার অন্যদের রাস্তা আটকানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিজেরা কীভাবে দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে এই ধরনের পদযাত্রা করে তা বুঝতে পারছি না।”

ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থেকে গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছেছিলেন একটি চা বাগানের কয়েকজন কর্মী। কিন্তু পিসি মিত্তল বাস টার্মিনাস থেকে কিছুটা দূরে তাঁদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়। এদিন আর কাজ করাই হয়নি তাঁদের। সেখান থেকেই ফিরে যেতে হয়েছে। এক কর্মী সুনীল হাঁসদা বলেন, “কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। পুলিশ বলল আর যাওয়া যাবে না। এতগুলো টাকা খরচ করে শহরে এলাম। হয়রানি তো হলই তার উপরে এত টাকার লোকসান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE