গ্যারিটি সেতু।—নিজস্ব চিত্র।
আত্রেয়ীর খাঁড়ির উপর গ্যারিটি সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। এত দিন পর্যন্ত তা সারানো হয়নি। বেহাল সেতুর উপর ভারী যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার জেরে এ বার বালুরঘাটের ঐতিহ্যপূর্ণ বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। শোভাযাত্রার পথ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারাও। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “সেতুটির অবস্থা খুব খারাপ। সেটির উপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করা যাবে না। সেতুর আগেই প্রতিমার শোভাযাত্রা ঘুরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সদর বালুরঘাট শহরে আত্রেয়ীর খাঁড়ির উপর ওই সেতু দিয়েই ভারী যানবাহন চলাচল করে। শহরের রঘুনাথপুর ট্যাঙ্ক মোড় থেকে পুলিশ লাইন, বাসস্ট্যান্ড, সাড়ে তিন নম্বর মোড়, ডানলপ মোড় হয়ে কাছারি রোড, প্রশাসনিক ভবন, চকভবানী কালীবাড়ি হয়ে পূর্ত দফতরের রাস্তাটি ফের ওই রঘুনাথপুর ট্যাঙ্ক মোড়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে। প্রতি বছর ইউ-আকৃতির ওই রাস্তা ধরে ট্রাক ও লরিতে দুর্গাপ্রতিমা চাপিয়ে গোটা শহরে শোভাযাত্রা করে ক্লাবগুলি। বেশি রাতে আত্রেয়ীর কল্যাণী ঘাট দিয়ে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন চলে শহরের এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের স ংযোগ রক্ষাকারী ওই সেতু সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে শহরবাসী পরপর ক্লাবগুলির প্রতিমা শোভাযাত্রার সঙ্গে বিজয়া দশমী উত্সব দেখতে মেতে ওঠেন। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে চলা ওই ট্রাডিশনে এবার ছন্দপতনের আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের।
গত জুনে শহরের ব্রিট্রিশ আমলের ওই গ্যারিটি সেতুটির তলায় ফাটল ধরে। সেতুর একাংশ বসে ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। পুরনো আমলের ওই সেতুটি বালুরঘাট শহরের পূর্ব-দক্ষিণ অংশের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম অংশের সংযোগকারী। জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অরূপ রায় বলেন, “বহু পুরনো আমলে তৈরি ওই সেতু জয়েস্ট-ব্রীজ নামে পরিচিত। বিৃ্ষ্টতে অবস্থা খারাপ হয়েছে। খাঁড়িতে জল থাকায় মেরামতি করা যাচ্ছে না। সেতুর দু’ধারে লোহার খুঁটি বসিয়ে ট্রাক-সহ বড় গাড়ি চলাচল আটকানো হয়েছে। তা না করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
শহরের বিগ বাজেটের পুজো আয়োজকদের বক্তব্য, পুজো প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি আমরা তুলেছিলাম। কিন্তু এখনও পুরসভা বা প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা পাওয়া যায়নি। বাসিন্দাদের বক্তব্য, আগে শহরের প্রতিমা নিরঞ্জন উত্সবকে ঘিরে বালুরঘাট পুর-কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। বালুরঘাট পুরসভার আরএসপির প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “বর্তমান পুর-কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারতেন।” আরএসপি নেতা তথা প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, “দশমীতে বালুরঘাটে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা ও মেলার ঐতিহ্য বহু পুরনো। এটা বজায় রাখতে হবে।”
তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল বলেন, “ শহরের রাস্তার ধারে গাছের ডাল ছাঁটার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ওই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিমা নিয়ে ট্রাক যেতে পারবে কিনা, সেই বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে।” তবে শোভাযাত্রার মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হলে শহরের একমুখী রাস্তায় একটি ক্লাবের সঙ্গে অপর একটি ক্লাবের শোভাযাত্রা মুখোমুখি হয়ে ব্যাপক যানজট তৈরির সম্ভাবনা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা ।
এই পরিস্থিতির জন্য পূর্ত দফতরকে দূষছেন পুজো উদ্যোক্তারা। বালুরঘাটের বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রীর শহরের একটি সেতু কেন মেরামতির অভাবে বিপজ্জনক হয়ে থাকবে, উঠেছে সেই প্রশ্নও। পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। তবে জেলা পূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, পুরনো সেতুটির বদলে নতুন কংক্রিটের সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায়ের দাবি, “শোভাযাত্রার ঐতিহ্য ব্যাহত হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy