Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভেজা চোখে গান-কবিতা, প্রতিবাদে মুখর ধূপগুড়ি

মঞ্চের সামনে বসে থাকা শিক্ষকেরাও তখন বারবার চোখ মুছছেন। গানের মাঝেই ফুঁপিয়ে উঠেছেন সহপাঠীরাও। আবৃত্তি শুরু হল মল্লিকা সেনগুপ্তের কবিতা পাঠ করে--‘তোমরা আমাদের ভালবেসেছ/ পীড়ন করেছ/ মানুষ কিন্তু ভাবনি/ আমি তো প্রতিবাদ করবই।” ধূপগুড়িতে এক দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের পরে গোটা এলাকাই শোকে, প্রতিবাদে উদ্বেল।

ধূপগুড়িতে নিহত ছাত্রীর স্মরণে তার স্কুলের পড়ুয়াদের মিছিল। সোমবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

ধূপগুড়িতে নিহত ছাত্রীর স্মরণে তার স্কুলের পড়ুয়াদের মিছিল। সোমবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২০
Share: Save:

মঞ্চের সামনে বসে থাকা শিক্ষকেরাও তখন বারবার চোখ মুছছেন। গানের মাঝেই ফুঁপিয়ে উঠেছেন সহপাঠীরাও। আবৃত্তি শুরু হল মল্লিকা সেনগুপ্তের কবিতা পাঠ করে--‘তোমরা আমাদের ভালবেসেছ/ পীড়ন করেছ/ মানুষ কিন্তু ভাবনি/ আমি তো প্রতিবাদ করবই।”

ধূপগুড়িতে এক দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের পরে গোটা এলাকাই শোকে, প্রতিবাদে উদ্বেল। রবিবার সকালে ধূপগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে একটি সিম খেত থেকে তার দেহ উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বরেই এই এলাকার আর এক দশম শ্রেণির ছাত্রীকে একই ভাবে খুন করা হয়েছিল। শহরের মানুষ বলছেন, পুলিশ প্রশাসন উদাসীন বলেই বারবার এমন মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটছে। সে কারণেই তাঁরা শোকের চেয়েও বেশি করে প্রতিবাদ করতে চান। ওই ছাত্রীর স্কুল কর্তৃপক্ষই সে পথে হেঁটে পথ দেখাল সোমবার। তাঁরা স্কুলের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান বদলে দিলেন প্রতিবাদ সভায়।

এ দিন সকালে স্কুল থেকে বের হল প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলে ‘সীমাহীন নৃশংসতার’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পোস্টার দেখা গিয়েছে। মিছিলের শেষে স্কুলে হয় স্মরণসভা। বিকেলের পরে মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হয় ছাত্রীদের কোরাস গানে, ‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো,’ ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু বিরহ দহন জাগে।’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার দে বলেন, “নানা উত্‌সবের আয়োজন ছিল। দু’টি মাঠে দুটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। ছাত্রীর খুনের ঘটনা শোনার পরে প্রথমে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। পরে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, অনুষ্ঠান মঞ্চকেই প্রতিবাদ মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। আগামী বুধবার পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।” ঘটনায় হতবাক সহকারী প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ রায়, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য প্রতুলচন্দ্র রায়েরাও। শিল্পী রকেয়া রায় বলেন, “আমি কলকাতা থেকে এসে যা শুনলাম তাতে মর্মাহত। এসেছিলাম আনন্দ অনুষ্ঠানে। এখন তা প্রতিবাদ সভা। তাই কবিতাও বদলে নিলাম।”

মুখোমুখি। (ডান দিকে) ধৃপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় ও (বাঁ দিকে) তৃণমূল নেত্রী সীমা চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ঘটনায় জড়িত সকলের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রীর খুনের ঘটনার প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাই। সকালে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ। তিনি ফিরে যেতে দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে যান সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়। তাঁদের কথা শেষ না হতে ছাত্রীর বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূলের অন্যতম প্রদেশ সম্পাদক সীমা চৌধুরী। দুপুরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষদস্তিদার। বিজেপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।

সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় বলেন, “রাজনীতি নয়, ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি হোক।” ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম প্রদেশ সম্পাদক সীমা চৌধুরীও। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে গেলেও মমতাদেবী ও সীমাদেবী এ দিন একসঙ্গে কথা বলেন। একই দাবি করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতিও।

ধূপগুড়িতে ছাত্রীকে স্মরণ শিক্ষকদের।

ঘটনার প্রতিবাদে এদিন ধূপগুড়ি ব্লকে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছিল এসএফআই। এ দিন ব্লকের বেশিরভাগ স্কুল ও কলেজই বন্ধ ছিল। দুপুরে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে শহরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও। প্রতিবাদে জলপাইগুড়িতে এসএফআই, শিলিগুড়িতে ডিএসও বিক্ষোভ দেখায়। ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ধূপগুড়ি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র অমিত রায়কে গ্রেফতার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE