চা মজুরি চুক্তি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ তুলে একযোগে পথে নামল বিরোধী দলের শ্রমিক সংগঠনগুলি। ডান-বাম মিলিয়ে ২৩টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বুধবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ি থেকে বাঘাযতীন পার্ক পর্যন্ত মিছিল করে। পরে সেখানেই সভা করে। এ বছরের মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর সময়েই সিপিএম, কংগ্রেস থেকে শুরু করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, আদিবাসী সংগঠন, নকশাল এবং অনান্য বাম এবং ডানপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি যৌথ মঞ্চ তৈরি করে। প্রথম থেকেই তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠন মঞ্চে যোগ দেয়নি। এ দিনের মিছিলেও তৃণমূলের কোনও শ্রমিক সংগঠন ছিল না। যৌথ মঞ্চের একাংশ সদস্যের দাবি, শাসক দলে থাকায়, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনও যদি যৌথ মঞ্চের দাবির সঙ্গে শরিক হতো, তবে চা শ্রমিকদের জন্য নুন্যতম মজুরি কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হতো। যৌথ মঞ্চের নেতাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন নানা কৌশলে মালিককে ফয়দা পাইয়ে দিতে চাইছে।
নানা ইস্যুতে পাহাড়-সমতলের যুযুধান দলগুলির মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে একজোট হয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএমের দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “এটা রাজনৈতিক কোনও মিছিল নয়। তবে তৃণমূল জামানায় সব শ্রমিক সংগঠনের একসঙ্গে পা মেলানো এ রাজ্যে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে নয়া মোড়।”
চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের অন্যতম সদস্য তথা চা শ্রমিক সংগঠনগুলির কো অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “রাজ্য সরকার যদি প্রথম থেকেই চা শ্রমিকদের দাবির উপরে জোর দিত তবে ৫ বার ত্রিপাক্ষিক আলোচনার পরে আমাদের রাস্তায় নামতে হতো না।” তরাই সংগ্রাম চা শ্রমিক ইউনিয়মের সহ সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “এর আগে বাম সরকারও চা শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরি নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়নি। বর্তমান সরকারও সে বিষয়ে গড়িমসি করছে। আলোচনার কোনও ক্ষেত্রে মনে হয়েছে মালিকপক্ষের সুরেই সরকারের প্রতিনিধিরা কথা বলছে।”
চা শ্রমিক মজুরি নিয়ে ইতিমধ্যে ৫ দফায় চুক্তি হয়ে গিয়েছে। শেষ বৈঠকে মালিকপক্ষ তিন বছরে তিন দফায় মোট ৩০-৪৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। সরকারের তরফেও সেই প্রস্তাব কিছুটা বাড়িয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে মেনে নিতে আর্জি জানায় বলে জানা গিয়েছে। যদিও যৌথ মঞ্চের তরফে তিন বছরে তিন দফায় মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ করে নুন্যতম মজুরির দাবি জানাতে থাকে। যৌথ মঞ্চের দাবি রাজ্যে কৃষি শ্রমিকরা দৈনিক ২০৬ টাকা নুন্যতম মজুরি পান। সে ক্ষেত্রে চা শ্রমিকদের মজুরি কৃষি ক্ষেত্রের থেকেও বেশিই হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৯৫ টাকা। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা নুন্যতম মজুরির বিষয়ে আলোচনা না করে মালিকপক্ষের প্রস্তাবিত কাঠামোয় সম্মতি দেওয়াতেই মজুরি চুক্তি রূপায়ণে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়েছে। তবে তৃণমূলের দাবি, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নুন্যতম মজুরি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছেন।
মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের আইনি পরামর্শদাতা তিলক চন্দ্র রোকার প্রশ্ন, “শেষ দফার বৈঠকে রাজ্য সরকার নিজে থেকে কিছু প্রস্তাব দেয়। এমনটা কেন হবে। রাজ্য কী মালিকপক্ষকে সাহায্য করতে চাইছে।” আদিবাসী নেতা জন বার্লার কটাক্ষ, “সব চা শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে মিছিল করেছে, শেষ কবে এমন হয়েছে মনে পড়ে না। তৃণমূল বা মালিকপক্ষ যাই দাবি করুন সম্মিলিত প্রতিবাদে কিছুই টিকবে না।”
তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি অলক চক্রবর্তী দাবি করেছেন, শেষ বৈঠকেই চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তির আওতায় আনার কথা রাজ্যের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যখন কোনও বিষয় আলোচনা চলবে ধংসাত্মক পথে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy