শোকার্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ থেকে ফিরছিল পরিবার। সকলের চোখে মুখে আনন্দের রেশ। সেই সময়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল খুড়তুতো ভাই-বোন। যার মধ্যে এক জনের বয়স মাত্র দু’বছর। বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহারের ডাউয়াগুড়িতে ওই দুর্ঘটনায় মারা যান ওই শিশু দু’টির সম্পর্কিত ঠাকুমাও। এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সিদ্ধেশ্বরী গ্রাম।
বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের একটি পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট গাড়ি ভাড়া নিয়ে ডাউয়াগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। রাতে খাওয়া সেরে ফেরার সময় ছোট গাড়িটির সঙ্গে উল্টোদিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই ছোটগাড়িটির চালক, পথচারী এক সাইকেল আরোহী-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে তিন জন একই পরিবারের সদস্য।
পুলিশ জানায়, সিদ্বেশ্বরী গ্রামের মৃতদের নাম সোমা সরকার (৪০), মানালি সরকার (১৪) ও প্রীতম সরকার (২)। বাকিদের একজন ওই ছোট গাড়ির চালক শান্তনু বর্মন (২৬)। তাঁর বাড়ি বানেশ্বরের হাতিডুবায়। অন্যজন বিশ্বজিৎ মজুমদার (৩০)। বাড়ি ডাউয়াগুড়িতে। দুর্ঘটনার সময় দু’টি গাড়ির মাঝে পড়ে যান সাইকেল আরোহী বিশ্বজিৎবাবু।
সোমাদেবী সম্পর্কে ওই দুই শিশুর সম্পর্কিত ঠাকুমা। ওই গাড়িতেই ছিলেন মৃত শিশু প্রীতমের বাবা পার্থ সরকার ও মা পিয়ালী সরকার। দুর্ঘটনায় দু’জনেই জখম হন। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসাও করা হয়। পার্থবাবু বলেন, “জমজ দুই ছেলেকে নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী পরিবারের ন’জনের সঙ্গে ডাউয়াগুড়ির ওই অন্নপ্রাশন বাড়িতে গিয়েছিলাম। খেয়ে দেয়ে সবাই গল্পগুজব করে ফিরছিলাম। কলেরপাড়ের কাছে বাচ্চাদের গায়ে চাদর জড়িয়ে দেওয়ার সময় আচমকা তীব্র শব্দে কেঁপে উঠি। তারপর কিছু মনে ছিল না। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি আমার চরম সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।”
পুলিশ জানায়, ছোট গাড়িটি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে ডাউয়াগুড়ি থেকে বাণেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল। ট্রাকটি কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জে যাচ্ছিল। রাস্তায় দুটি গাড়িই তীব্র গতিতে থাকার জন্য মুখোমুখি সংঘর্ষের পর বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। দুটি গাড়িও ছিটকে রাস্তা থেকে খানিকটা নীচু এলাকায় নেমে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথম দুমড়ে যাওয়া ছোট গাড়ি থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার কাজে নামেন। পরে দমকল, পুলিশ কর্মীরা সেখানে যান। রাতে দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান বাড়িতেও শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতদের এক আত্মীয় বলেন, “তখনও অনেক লোকের খাওয়া দাওয়া বাকি ছিল। সব ফেলে সবাই ছুটে আসি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy