মালদহে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তৃণমূলের সভা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মঞ্চে নেতা নেত্রীদের ভিড় উপচে পড়লেও, কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে ভাঁটার টান লক্ষ করে তৃণমূলের ব্লক নেতারা দুষলেন জেলা নেতৃত্বকে। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে মালদহ প্রশাসনিক ভবনের সামনে তৃণমূলের সভার কথা কর্মী সমর্থকদের আগাম জানানো হয়নি।
তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলা নেতৃত্ব সোমবার রাতে ব্লক নেতাদের জানিয়েছিলেন যে, মঙ্গলবার পাল্টা সভা করা হবে। কিন্তু ওই অল্প সময়ের মধ্যে সে কথা সাধারণ কর্মী সমর্থকদের জানানো যায়নি। তাই নেতারা হাজির থাকলেও কর্মীরা হাজির হতে পারেন নি। ফলে এদিন প্রায় ফাঁকা মাঠেই বক্তব্য রাখতে হল তৃণমূল নেতৃত্বকে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেছেন, এদিন বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত ব্লক নেতৃত্বকেই আগাম জানানো হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই হাজার খানেক কর্মী সমর্থক হাজির হয়েছেন। এদিনের এই ভিড় প্রমাণ করল যে মালদহের মানুষ আর কংগ্রেসকে চায় না।’’
গত ১৮ অগস্ট কংগ্রেসের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের দিন মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নুরকে হেনস্থার প্রতিবাদে সোমবার প্রতিবাদ সভা করে কংগ্রেস। ওইদিন দিনভর বৃষ্টি সত্ত্বেও কংগ্রেসের প্রচুর কর্মী সমর্থক সভায় ভিড় জমান বলে দাবি। কংগ্রেসের প্রতিবাদ সভার বিরুদ্ধে তৃণমূলের মালদহ জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে মঙ্গলবার পাল্টা সভার ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। এই সভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যুব তৃণমূল ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্বকে। এদিনের সভাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজার বিধানসভার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, দুই কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার, প্রতিভা সিংহ, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস সহ তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে এক ঝাঁক নেতা নেত্রী। তৃণমূলের সভামঞ্চে তিল ধারণের মতো জায়গা ছিল না। কিন্তু কর্মী সমর্থকদের ভিড় নজরে আসেনি বলে আক্ষেপ দলের অন্দরেই।
এদিন প্রতিবাদ সভার পর মালদহে কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থা, গ্রামগঞ্জের বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়েও স্মারকলিপি দেন তাঁরা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মালদহ জেলা পরিষদে সিপিএম ও কংগ্রেসের গোপন আঁতাঁত রয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস গোপন আতাঁত করে জেলা পরিষদ চালাচ্ছে। যার ফলে জেলার উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা পড়ে থাকলে জেলা পরিষদ কোনও কাজ করছে না।’’
যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের সরলা মুর্মু বলেন, ‘‘জেলা পরিষদকে ঠিক মতো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য সরকার বঞ্চনা করছে। জেলা পরিষদের তরফ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য যা করা সম্ভব, তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
এদিন তৃণমূলের সভায় কর্মী সমর্থকদের হাজিরা নিয়ে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেসও। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমাদের মঞ্চ ব্যবহার করলেই কর্মীদের ভিড় হবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ দলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। এদিন তার একভাগও মানুষ আসেননি। ফের প্রমাণ হল মালদহের মাটি কংগ্রেসের, গনিখানের মাটি।’’
এদিকে, তৃণমূলের এদিনের সভায় আসা যোগ দিতে আসা পুরাতন মালদহ পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশ বলেন, ‘‘আমাদের প্রচুর কর্মী সমর্থক থাকা সত্ত্বেও সভায় আনতে পারলাম না। কারণ আমাদের আগাম জানানো হয়নি। অন্য ব্লকেও এমনই অবস্থা হয়েছে। তাই এদিন কংগ্রেসের সভার একভাগ লোকও হয়নি।’’ এই বিষয়ে তৃণমূলের যুব ও ছাত্র নেতা অম্লান ভাদুড়ি ও প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘সকলকেই জানানো হয়েছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy