Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তা বেহাল কেন, মমতার ফোন টাইগার হিল থেকে

সন্ধ্যা হব হব। হনহনিয়ে পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে উঠছেন এক মহিলা। পায়ে হাওয়াই চটি। পিছনে গলদঘর্ম সরকারি কর্তারা। চড়াই উঠতে গিয়ে ঘামে কোট-জ্যাকেট ভিজে গিয়েছে। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তা তাঁরা খোলেন কী করে! কিছুক্ষণ পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অবশ্য গা থেকে শালটা খুলে ধরতে দিলেন এক নিরাপত্তারক্ষীকে। তারপরেই পিছন ফিরে পুলিশ কর্তা রাজ কানোজিয়াকে বললেন, ‘রাজ কোটটা খুলে নাও। যারা কোট-জ্যাকেট পরে আছো খুলে নিতে পার।’’ সকলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

 বুধবার টাইগার হিলে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

বুধবার টাইগার হিলে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

কিশোর সাহা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

সন্ধ্যা হব হব। হনহনিয়ে পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে উঠছেন এক মহিলা। পায়ে হাওয়াই চটি। পিছনে গলদঘর্ম সরকারি কর্তারা। চড়াই উঠতে গিয়ে ঘামে কোট-জ্যাকেট ভিজে গিয়েছে। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তা তাঁরা খোলেন কী করে!

কিছুক্ষণ পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অবশ্য গা থেকে শালটা খুলে ধরতে দিলেন এক নিরাপত্তারক্ষীকে। তারপরেই পিছন ফিরে পুলিশ কর্তা রাজ কানোজিয়াকে বললেন, ‘রাজ কোটটা খুলে নাও। যারা কোট-জ্যাকেট পরে আছো খুলে নিতে পার।’’ সকলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ট্রেক’ করে টাইগার হিলে যাওয়ার পথে সরকারি কর্তাদের এইটুকুই যা স্বস্তি মিলেছিল। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ চড়তে থাকে রাস্তার হাল দেখে।

ওই পথে পড়ে ঘুম-খাসমহল, দেয়ারিগাঁও, শিয়ালদাঁড়া। গত জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী টাইগার হিলে যাওয়ার পথে ওই সব পাহাড়ি গ্রামে হোম-স্টে গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন পর্যটন দফতরকে। টাইগার হিলে ঢোকার মুখে যে ডাকবাংলোটি ১৯৮৮ সালে জিএনএলএফ পুড়িয়ে দিয়েছিল, সেটি ঠিকঠাক করে চালু করার দায়িত্বও দিয়েছিলেন ওই দফতরকে। কিন্তু কাজ এতটুকুও এগোয়নি। সেখানে দাঁড়িয়েই রীতিমতো ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন সচিবকে ফোন করে ভর্ৎসনা করলেন। ওই এলাকায় জমি হস্তান্তরে সমস্যা রয়েছে শুনে নির্দেশ দিলেন, তা যে ভাবে হোক তাড়াতাড়ি মেটাতে হবে। সঙ্গীদের জানিয়ে দিলেন, শনিবারের মধ্যেই টাইগার হিলে পৌঁছে যাবেন পর্যটন দফতরের অফিসাররা।

ওই দিন বিকেল ৩টে নাগাদ দার্জিলিঙের লালকুঠি থেকে বেরিয়ে রিচমন্ড হিলে যাওয়ার বদলে আচমকা মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি ঘুরিয়ে টাইগার হিল চলে যান। ঘুম পেরোনোর পরে গাড়িও ছেড়ে দেন। সফরসঙ্গীদের তিনি জানিয়ে দেন, যাঁরা হাঁটতে পারবেন না, তাঁরা ধীরেসুস্থে গাড়িতে বসে উঠতে পারেন। পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ কয়েকজন খানিকটা হেঁটেই গাড়িতে উঠে পড়েন। নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়াও ডিজি (উপকূল) রাজ কানোজিয়া, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জিটিএ-এর প্রধান সচিব সহ জনা দশেক ‘ট্রেক’ করেন। প্রায় ৭ কিলোমিটার হেঁটে টাইগার হিলে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আশেপাশের গ্রামের মানুষ তখন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘লামাহাটা বদলে গিয়েছে। তা হলে টাইগার হিলের আশেপাশের গ্রামের অর্থনীতি পাল্টাবে না কেন?’’

উত্তরবঙ্গ সফর সেরে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বাগডোগরায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

লামাহাটার মতো টাইগার হিলেও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই করে সংস্কার হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঞ্চল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে টাইগার হিল। চিতাবাঘ, পাহাড়ি ছাগল, ভালুক, নানা প্রজাতির বাঁদর, বিরল স্যালামান্ডারের দেখা মেলে। সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়লে পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কোথাও কংক্রিটের কিছু করা হবে না। বনবস্তির সঙ্গে মানাসই করেই সব কিছু তৈরি হবে। গ্রামবাসীদেরই তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুসারে, ঘুম থেকে টাইগার হিল রাস্তায় তৈরি হবে একাধিক বিশ্রামের জায়গা। পুলিশ পাহারা থাকবে। গোটা পথ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। টাইগার হিলে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে।

টাইগার হিলের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি জিটিএ-র অধীনে রয়েছে। ওই কেন্দ্রের সিঁড়ি, শৌচাগারের বেহাল দশা দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘গোটা দুনিয়া টাইগার হিলের নাম জানে। ছুটে আসে এখানে। সেখানকার সিঁড়ি এত বিপজ্জনক থাকবে, তা হতে পারে না।’’ তিনি জানান, শৌচাগার আধুনিক করা হবে। ভাল রেস্তোরাঁ থাকবে। প্লাস্টিক মুক্ত আসবাব ব্যবহার হবে। জিটিএ-কে দ্রুত সব ব্যবস্থা করতে হবে। জিটিএ-র প্রধান সচিব রবিন্দর সিংহ সেখানে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দেন, কোনও অঘটন না হলে পুজোর আগেই ঝকঝকে হয়ে উঠবে টাইগার হিল।

কথায়-কথায় সময় গড়িয়েছে। চায়ের কাপ হাতে এলাকা ঘুরে আমজনতার সঙ্গে গল্প করার ফাঁকে গানও গেয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা দেখে হাততালি দিয়ে তাল মেলানোর চেষ্টা করেছেন পাহাড়বাসীরাও।
অবাক হয়ে দেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান গাইছেন ডিজি, এসপি, ডিএমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE