Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সরকারি আইনজীবীর জামিন নাকচের পরে শুরু কর্মবিরতি

জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবাশিস বসুর বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের বিচারক সব্যসাচী চট্টরাজ তখন পুলিশকে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছিলেন। বুধবার দেবাশিসবাবুর জামিনের আবেদনও নাকচ করে দেন সব্যসাচীবাবু। এখন সেই সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতি, দুর্ব্যবহার সহ একাধিক অভিযোগ তুলে তাঁর বদলি চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করলেন এই আদালতের আইনজীবীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবাশিস বসুর বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের বিচারক সব্যসাচী চট্টরাজ তখন পুলিশকে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছিলেন। বুধবার দেবাশিসবাবুর জামিনের আবেদনও নাকচ করে দেন সব্যসাচীবাবু। এখন সেই সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতি, দুর্ব্যবহার সহ একাধিক অভিযোগ তুলে তাঁর বদলি চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করলেন এই আদালতের আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ নাগাদ উত্তর দিনাজপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বৈঠক করে সব্যসাচীবাবুকে বদলি না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ভারতী ভট্টাচার্যের কাছে সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে একাধিক অভিযোগ জানিয়ে তাঁকে বদলির দাবি জানানো হয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ ঘোষের দাবি, ‘‘সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে খুনের মামলার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ওই অনুমতিও তিনি আইন মেনে দেননি।’’

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বারবার প্রকাশ্যে আইনজীবীদের বলেছেন, আদালতের কাজকর্ম ব্যাহত হয় এমন কোনও কাজ না করতে। কথায় কথায় কর্মবিরতিরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। তারপরেও এ দিন রায়গঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের এই সিদ্ধান্তের পরে খোদ সব্যসাচীবাবুর মন্তব্য, ‘‘আইনজীবীরা কর্মবিরতি চালিয়ে গেলে বিচারপ্রার্থী ও অভিযুক্তরা সরাসরি আমার এজলাসে জামিন সহ নিজেদের স্বপক্ষে বক্তব্য পেশ করতে পারেন। আইন মেনে আমি তাঁদের পাশে রয়েছি।’’

তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি সম্পর্কে সব্যসাচীবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে কেউই যে কোনও অভিযোগ তুলতে পারেন। হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া আমার সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করার এক্তিয়ার নেই।’’

দেবাশিসবাবু তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নারায়ণবাবু কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তবে নারায়ণবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ কিন্তু প্রধান বিচারপতি বারবার কর্মবিরতির বিরোধিতা করার পরেও কেন তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? নারায়ণবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রধান বিচারপতি যাই বলুন না কেন, আমরা তাঁর চাকরি করি না। আমরা যা করছি, তা বিচারপ্রার্থী, বিচার ও আইনজীবীদের স্বার্থেই।’’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রায়গঞ্জের তুলসীতলা এলাকায় নিজের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দেবাশিসবাবুর স্ত্রী রেণুকা বসু (৪৩)। তার পরে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা দায়ের করে তাঁকে গ্রেফতার করে। চার দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার পরে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সব্যসাচীবাবুর আদালতে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে খুন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রমাণ লোপাট ও নিষিদ্ধ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে ৩০২, ৩০৬, ২০১ ও ২৭(২) ধারায় মামলা দায়ের করার অনুমতি চায়। অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, ওই দিন সব্যসাচীবাবু প্রথমে পুলিশকে অভিযুক্তপক্ষ ও সরকারি আইনজীবীদের সামনে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে সবক’টি ধারায় মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়ে তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে আইনজীবীরা এজলাস ছেড়ে চলে গেলে তিনি সেই অনুমতি বাতিল করে নতুন করে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারাটি বাদ দিয়ে মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন! আইনজীবীদের দাবি, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানাতে সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর এজলাসে গেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা না করে চলে যান। নারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘দেবাশিসবাবুর মামলা বলে আলাদা কোনও ব্যাপার নেই। কোনও মামলায় বিচারক পরপর দু’বার কোনও অনুমতি বা নির্দেশ দিতে পারেন না।’’

এ দিন আইনজীবীরা কাজে যোগ না দেওয়ায় বহু বিচারপ্রার্থী মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে এসে ঘুরে যেতে বাধ্য হন। আইনজীবীদের অভাবে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের জামিন আটকে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE