Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃতি যেখানে যেমন...

গত ২৬ অগস্ট দীনবন্ধু মঞ্চের প্রেক্ষাগৃহ মুখরিত হল নৃত্যের লয়ে এক অনন্য সন্ধ্যায়। আয়োজনে শিলিগুড়ির নৃত্যছন্দম। কৃষ্ণবন্দার সঙ্গে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গত দশ বছর ধরে বার্ষিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করছে নৃত্যছন্দম।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

ধ্রুপদী ছন্দের মিশেলে রবীন্দ্রনাথ

গত ২৬ অগস্ট দীনবন্ধু মঞ্চের প্রেক্ষাগৃহ মুখরিত হল নৃত্যের লয়ে এক অনন্য সন্ধ্যায়। আয়োজনে শিলিগুড়ির নৃত্যছন্দম। কৃষ্ণবন্দার সঙ্গে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গত দশ বছর ধরে বার্ষিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করছে নৃত্যছন্দম। এ দিনও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল রবীন্দ্রনৃত্যের সঙ্গে কত্থক এবং ভারতনট্টমের সংমিশ্রন। অংশগ্রহণ করেন রিয়া, মৌসুমী, জাগৃতি, রাজন্যা, কথাশ্রিতা, বর্ষা প্রমুখ। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের মেলবন্ধনে পরিবেশিত হয় এক অপূর্ব নৃত্যভাবনা। এই পর্বে নৃত্যে অংশ নিয়েছিল অধ্যক্ষা সুতপা রায় সঙ্গীতে বিনীতা পাল এবং কবিতায় পারমিতা দাশগুপ্ত। একে একে নৃত্যের তালে উঠে আসে কত্থকের ঝাঁপতাল, ত্রিতাল, একতাল। বাদ পরেনি মারাঠি লোকনৃত্য থেকে গুজরাতি এমনকী সাওতাল লোকনৃত্যও। বাংলা লোকনৃত্যের মধঅযে উঠে আসে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য। একঝাঁক কচিকাচারা নজরুল নৃত্যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে। পরিবেশনা ছিল তুনিরা, রূপমা, ইপ্সা, দৃপ্তা, মনামির মতো শিশুশিল্পীরা। একটু অন্যস্বাদের কবিতার অনুষ্ঠান পরিবেশন করে উবাচ। ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ শীর্ষক এই কবিতার কোলাজে ছিল অর্পণা, রিনিক্তা, সীমা, শোভনা। অনুষ্ঠানের সমগ্র নৃত্য পরিচালনা করেছেন অধ্যক্ষা সুতপা রায় এবং সঞ্চালনায় পারমিতা দাশগুপ্ত।

উত্তরের অসুখ

সেই দেশ মিথকথা আর কিংবদন্তির। সেখানে ‘সারিন্দার লোককথা’ এখনও সুরের সন্ধান করে। সুরের সন্ধান করলেন জ্যোতির্ময় রায়ও। তুলে আনা সুরের ছোঁয়া লাগল কবিতায়। কবিতা শোনালো, ‘‘রাত্রিকথার ভাষ্য’’ আলাপে ‘‘ছিঁড়ে যাওয়া স্মৃতি’’। ‘সবুজ’ কবিতার দীর্ঘপাঠে ‘‘ধানের শিষে গন্ধজীবন’’-এর কথা। শুধু সুর নয়, অন্বেষণে শিকড়সন্ধানও। শৈশব জনপদের ‘মেঘবালিকার মুক্ত আকাশে’ আজ আর তার ঠিকানা মেলে না। ‘নিয়ত পরিবর্তনশীল’ সম্পর্কের শিকড় যখন শুধু ‘সিমে গাঁথা সুখময় অবকাশ’ তখন হঠাৎই উঁকি দেয় ‘উত্তরের অসুখ’। সেই অসুখ কি ‘অন্ধকারের ছায়ায় আমাদের আলোকিত মুখ?’

অনলাইন প্রতিযোগিতা

নর্দার্ন ফটোগ্রাফিক সোসাইটির উদ্যোগে অনলাইন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা হল ইসলামপুরে। বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস উপলক্ষ্যে অনলাইনে সেই প্রতিযোগিতা হয়. উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও তুর্কির কয়েক জন ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। মোট ৭৮ জন সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে মোট ১৯৭টি ছবি জমা পড়েছিল। প্রথম স্থান অধিকার করেন কর্ণাটকের গণপতি হেগড়ে, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন নদীয়ার রথীন দে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন শিলিগুড়ির রূপম দে। এ ছাড়াও বিশেষ ফটোগ্রাফির শিরোপা পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের শুভেন্দু বাগচী ও কলকাতার শুভার্থী চৌধুরী।

‘শ্রুতি’র বার্ষিকী

মালদহের সানাউল্লাহ মঞ্চে সম্প্রতি হয়ে গেল ‘শ্রুতি’র বার্ষিক অনুষ্ঠান। খুদে শিক্ষার্থী আত্মপ্রভা, প্রাপ্তি, সায়ন্তনী, সংঘমিত্রা, সোহিনী, দিয়া ও দেবপ্রিয়ারা রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করে। অপর্ণা অধিকারী ও অন্বেষা পাঁজা-র গাওয়া ‘পরদেশী মেঘ’ এবং ‘বুলবুলি নীরবে’ নজরুলগীতি দুটি উপভোগ্য। সৃষ্টি সরকারের চয়নে ছিল অতুলপ্রসাদের ‘বধূঁ এমন বাদল দিনে তুমি কোথা’। আধুনিক গানে অদিতি ভদ্রের ‘এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে’ এবং দেবাশিস খানের ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারা দিন’ শুনতে বেশ ভাল লাগে। শুচিস্মিতা দাসের কণ্ঠে পরিবেশিত ‘মন চায় আজ সন্ধ্যায়’ এবং ‘ঘুম ঘুম চাঁদ’ ছিল মনোগ্রাহী। সঙ্গতে সহযোগিতা করেছেন তবলায় অভিজিৎ চৌধুরী ও বিপ্লব সাহা। এ ছাড়া কি-বোর্ডে জয়জিৎ সাহা ও বিভাস রায়, গিটারে চিরঞ্জিত দাস এবং অক্টোপ্যাডে ছিলেন সৌমেন দত্ত।

কবিতায় বাঁক

মালবাজারের পরিমল মিত্র স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল জাতীয় আলোচনা চক্র। বিষয় : স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা কবিতা। ১৯৪৭-২০১৫, এই পর্বে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কবিতার বাঁক পরিবর্তন কী ভাবে ঘটেছে, তা তুলে ধরেন মিলনকান্তি শতপথী। শিলচরের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জনমানসে বাংলা কবিতার প্রভাব, কী ভাবে তৈরি হচ্ছে ভাষাবোধ—জানা গেল অধ্যাপক সঞ্জয় দে-র কাছ থেকে। ১২টি জনগোষ্ঠীর কবিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক প্রমোদ নাথ। শূন্য দশকের কবিতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন শূন্য দশকের কবি দীপ্তি প্রকাশ দে। কবি জীবনানন্দ দাশ থেকে কবি শ্রীজাত পর্যন্ত একটি পরিক্রমায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা কবিতায় প্রেমের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন কবি দেবেশ ঠাকুর। দু’দিনের এই আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন অশ্রুকুমার সিকদার। অংশ নেন ৪০ জন গবেষক। সহযোগিতায় ধ্রুবতারা সোসাইটি।

আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন

রায়গঞ্জের এন এস রোড-বি বি ডি মোড়ে রায়গঞ্জ পুরসভার উদ্যোগে বিনয়-বাদল-দিনেশের আবক্ষ মূর্তির শুভ উন্মোচন হল ১৫ অগস্ট। উন্মোচন করেন পুরপিতা তথা বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। প্রধান অতিথি ছিলেন ড. আনন্দগোপাল ঘোষ। এই উপলক্ষে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ড. ঘোষ জানান, ইতিপূর্বে রায়গঞ্জ পুরসভার উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় স্তরের নেতাদের বহু মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা সূত্রে বিনয়-বাদল-দিনেশের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হল। এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মের উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এলাকার সাংস্কৃতিক পরিবেশও উন্নত হবে। তিন বিপ্লবীর সংক্ষিপ্ত জীবন আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জেলা পরিষদের সদস্য নার্গিস খাতুন, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুশীল গোস্বামী, উপ-পুরপিতা রাজেন্দ্রকুমার দাস প্রমুখ।

লেখা ও ছবি: অনিতা দত্ত

স্মৃতি পুরস্কার

সম্প্রতি মালদহের টাউন হলে অধীরচন্দ্র বর্মন স্মৃতি স্মারক পুরস্কার ও বিমলা বর্মন স্মৃতি স্মারক পুরস্কার প্রদান করা হয়। ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক অমিতকুমার দে-র হাতে অধীরচন্দ্র বর্মন নামাঙ্কিত স্মারক পুরস্কার তুলে দেন অধ্যাপক স্বপনকুমার মণ্ডল। কথাসাহিত্যিক পীযূষ ভট্টাচার্যকে বিমলা বর্মন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করেন ড. আনন্দগোপাল ঘোষ। আয়োজক সংবেদন প্রকাশনা গোষ্ঠী। আয়োজকদের পক্ষ থেকে গুণিজন সংবর্ধনা দেওয়া হয় নাট্যকার পরিমল ত্রিবেদীকে।

প্রবন্ধে বাংলার মুখ

যেন অক্ষরে আঁকা ‘বাংলার মুখ’। যেখানে ধরা রয়েছে বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালি’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নীরা’, রমাপদ চৌধুরীর ‘ভারতবর্ষ’, মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ন হন্যতে’, প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ এবং অন্যান্য সৃজন। তাঁদের প্রবন্ধে এমনই সব বিষয়ে আলোকপাত করলেন আনন্দগোপাল ঘোষ, মানিক মৈত্র, হৈমন্তী বর্মন এবং আরও অনেকে। অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের শেষ রচনাতেও চিরকালীন বাংলার মুখ—অপু দুর্গা হরিহর। অথবা বেণু দত্তরায়ের কবিতা। এ ভাবেই তিলতিল করে তিলোত্তমা হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ির সংকলন ‘বাংলার মুখ’ (সম্পাদনা : উমা মাজী মুখোপাধ্যায়)।

লেখা ও ছবি: সুদীপ দত্ত

পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান

সম্প্রতি জলপাইগুড়ির সুভাষ ময়দানে ‘নীরজ কোরক’ পত্রিকাগোষ্ঠীর উদ্যোগে আয়োজিত হল পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান। বসেছিল সাহিত্যবাসর। সূচনা হল মনীষিতা নন্দী ও সৈকত ঘোষের দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশিত সরস্বতী বন্দনা দিয়ে। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌগত মুখোপাধ্যায় ও শিবম ঘোষ। পত্রিকাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে লোকসংস্কৃতি গবেষক প্রমোদ নাথ ও বিমলেন্দু মজুমদারকে সংবর্ধিত করেন গল্পকার অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাবন্ধিক অশেষ দাশ। নীরজ কোরকের বৈশাখ থেকে বর্ষাযাপন সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন বিমলেন্দু মজুমদার। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসের গ্রন্থ ‘চারটি উপন্যাস’। প্রকাশ করেন কবি রানা সরকার ও সপ্তাশ্ব ভৌমিক। প্রয়াত গদ্যকার অশোক বসুর ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বসেছিল সাহিত্যবাসর।

কবি স্মরণে সাহিত্য সভা

কর্মরত ছিলেন বনবিভাগে। তাই তাঁর রচিত কবিতায়, গল্পে, নাটকে অরণ্যের আতিশয্য। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হলুদ বনের বিষণ্ণতা’। লিখেছেন নাটক ‘অরণ্যের জলছবি’, ‘অন্য অরণ্য’। ১৯৮৯-তে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মিঞ্জিরি’। তিনি, কবি নীতীশ দত্ত। কবির দ্বিতীয় প্রয়াণবার্ষিকীতে (১৯১৩, ২৪ জুলাই) কোচবিহারের সাহিত্যসভা ভবনে স্মরণ করা হল তাঁকে। আয়োজক তোর্সা সাহিত্য পরিষদ। কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন তাঁর সহধর্মিণী বাবলি বসু। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের স্মৃতিচারণায় আবর্তিত হয় কবির জীবন ও সৃষ্টির কথা। তাঁর কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঠ করেন রূপশ্রী মুখোপাধ্যায়, শ্যামল সরকার ও উৎসব বসু। স্মরণসন্ধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। স্বরচিত কবিতায় শ্রদ্ধা জানান কবি সমীর চট্টোপাধ্যায়, মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস, অমর চক্রবর্তী প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE