Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হরিরামপুরে ফের কাজিয়া বিপ্লব-সোনার

বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে সোনা পালকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের ভাইদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনা পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০০
Share: Save:

বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে সোনা পালকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের ভাইদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনা পাল। রবিবার বিকেলে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘শনিবার হরিরামপুরে পঞ্চায়েতের উপ নির্বাচনে সুবিধা করতে না পেরে রাত থেকে একাধিকবার টেলিফোনে বিপ্লববাবুর ভাইয়েরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বাড়িতে ঢুকে হামলার হুমকিও দেওয়া হয়। পুলিশকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগ করবো।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘মনগড়া অভিযোগ। আমার ভাইয়েরা কেন ওকে হুমকি দিতে যাবে? সোনাবাবুকে অনেকদিন আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরাসরি ভোট করেছে। ওর নেতৃত্বে একদল লোক বুথ দখল ও স্ট্রংরুমে ঢোকার চেষ্টা করেছে। তাতে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ হওয়াই স্বাভাবিক।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে দেখা হবে।’’ হরিরামপুরে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে বলে স্বীকার করে পুলিশ সুপার জানান, সেখানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত হরিরামপুরে দুপক্ষের কয়েকশো লোকের জমায়েত থেকে সংঘর্ষ ঠেকাতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড লেপচার নেতৃত্বে ডিএসপি এবং আইসিরা বিরাট পুলিশ বাহিনী, র‌্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। হরিরামপুর ব্লকের বাগিচাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের বেতনা সংসদ আসনে এবং হরিরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিরসি আসনে ব্যাপক হারে ভোট পড়ার পিছনে সোনা পালের দাপটের অভিযোগ তুলে তৃণমূল শিবিরে উত্তেজনাও ছড়ায়। রাত ১০টা নাগাদ হরিরামপুর বাজারে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। সোনাবাবুর উপর হামলা হবে বলে অভিযোগ পেয়ে তাঁর অনুগামী অন্তত হাজারখানেক কর্মী সমর্থক জড়ো হয়ে যান। এবং সোনাবাবুর বাড়ি ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে পাহারা দিতে থাকেন তাঁরা।

বিপ্লববাবুকে সোনাবাবু আগাগোড়া কাকু বলে ডাকেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ২০১১ সালে হরিরামপুর বিধানসভায় এলাকার দাপুটে নেতা সোনাবাবুর সাহায্য নিয়েই বিপ্লববাবু জয়লাভ করেন। এরপর পুরস্কার হিসাবে সোনাবাবুকে জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পদে বসান বিপ্লববাবু। এরপরই কাকুর সঙ্গে জেলাপরিষদের কাজ নিয়ে সোনাবাবুর মনকষাকষি, দূরত্ব তৈরি হয়। সোনাবাবুর উপরে নির্ভরতা কমাতে হরিরামপুরে সোনাবাবুর বিরোধী নেতা তাজমুল হককে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি করে পাল্টা চাপ তৈরি হতে থাকে বলে অভিযোগ। এই সময় পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে বিপ্লবাববুর অনুগামী তাজমুল সহ পঞ্চায়েত সভাপতিদের মারধোরের অভিযোগ ওঠে সোনাবাবুর বিরুদ্ধে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় পূর্তকর্মাধ্যক্ষের পদ থেকেও। কিন্তু জেলা সভাপতির ওই বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সোনা দাবি করেন, তাঁকে বহিষ্কারের কোনও অধিকার বিপ্লববাবুর নেই। এরপর জেলার একাংশ বিধায়ক থেকে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে সোনাবাবুর ঘনিষ্ঠতা এবং মোটা টাকার বিনিময়ে তৃণমূলের আজীবন সদস্যপদ সংগ্রহেও তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দে খা যায়।

দলীয় সূত্রের খবর, সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে বোর্ড দখলের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের উপনির্বাচন তেমন গুরুত্ব না থাকলেও জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর খাস তালুক হরিরামপুরে ওই দু’টি আসনে শনিবারের ভোট ছিল দুপক্ষের সম্মান রক্ষার লড়াই। প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবারের উপনির্বাচনে গঙ্গারামপুরে প্রায় ৬২ শতাংশ এবং বালুরঘাটে ভোট গ্রহণের হার প্রায় ৬৯ শতাংশ। সেখানে হরিরামপুরে গ্রামপঞ্চায়েতের আসনে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ভোট পড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘হরিরামপুরে অস্বাভাবিক বেশি ভোট পড়লেও পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে কোনও হেরফের হবে না। সবই করা হয়েছে বদমায়েশি থেকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE