Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হারানো মাছ ফেরাতে চায় মৎস্য দফতর

নদী থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল মৎস্য দফতর। কোচবিহারে তোর্সা থেকে শুরু করে কালজানি, সব নদীতেই গোটা জুলাই মাস ধরে মাছের পোনা ছাড়বেন তাঁরা। মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, জেলার নদীগুলিতে এক সময় রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা মাছের ঝাঁক ঘুরে বেড়াত। এখন সপ্তাহে পাঁচ কেজি মাছও ধরা পড়ে না। ওই মাছগুলি ফিরিয়ে আনতেই ১৫ লক্ষ টাকার পোনা ছাড়া হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

নদী থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল মৎস্য দফতর। কোচবিহারে তোর্সা থেকে শুরু করে কালজানি, সব নদীতেই গোটা জুলাই মাস ধরে মাছের পোনা ছাড়বেন তাঁরা।

মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, জেলার নদীগুলিতে এক সময় রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা মাছের ঝাঁক ঘুরে বেড়াত। এখন সপ্তাহে পাঁচ কেজি মাছও ধরা পড়ে না। ওই মাছগুলি ফিরিয়ে আনতেই ১৫ লক্ষ টাকার পোনা ছাড়া হবে। তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, মানসাই-সহ জেলার সমস্ত নদীতেই ভাগ ভাগ করে ওই মাছ ছাড়া হবে। সেগুলিকে বড় করার দিকেও নজরদারি করবে মৎস্য দফতর। মৎস্যজীবীদের এ সম্পর্কে সচেতন করার কাজও চলবে একই সঙ্গে। মৎস্য দফতর মনে করছে, মৎস্যজীবীদের একাংশের সচেতনতার অভাবেই নদীর মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

মৎস্য দফতরের কোচবিহারের জেলা আধিকারিক অলোক প্রহরাজ বলেন, “এক সময় যে মাছগুলি জেলার নদীতে ধরা পড়ত তা এখন আর দেখা যায় না বললেই চলে। নদীর ওই মাছগুলি আকারে যেমন বড় হতো, তেমনই তা খেতেও সুস্বাদু হতো। সমস্ত বাজারেই তাদের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা ওই মাছ নদীতে ফের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছি। পাশাপাশি নদীর ছোট মাছ রক্ষায় একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

মৎস্য দফতরের ওই উদ্যোগে খুশি মৎস্যজীবীরা। কালীঘাটের মৎস্যজীবী রবিন দাস, মন্টু দাস, ফুলেশ্বর দাসেরা জানান, এক সময় নদীতে প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরা পড়ত। ফুলেশ্বর বলেন, “আগে তিন থেকে চার ঘণ্টা মাছ ধরলেই দিনের পারিশ্রমিক উঠে যেত। সংসারও চলত। এখন সারা রাত মাছ ধরার পড়েও অনেক সময় নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।”

মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, পনেরো-কুড়ি বছর আগেও বঁড়শি দিয়ে অনেকে নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতেন। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা ওই মাছ ধরে এনে তা পুকুরে বা ছোট জলাশয়ে ছেড়ে দিয়ে মাছের চাষ করতেন। এখন নদীতে সে ভাবে মাছ না মেলায় মৎস্যজীবীরা অনেকটাই পুকুরের মাছের উপরে নির্ভরশীল। দক্ষিণবঙ্গ বা বাইরের রাজ্য থেকে মাছের পোনা এনে তা পুকুরে ছেড়ে চাষ করেন অনেকে। কিছু স্থানীয় হ্যাচারি থেকে মাছ সংগ্রহ করেন তাঁরা। দফতর সূত্রে আরও জানা যায়, কয়েক বছর আগেই কোচবিহারের নদীগুলি থেকে সপ্তাহে থেকে ২০০-৩০০ কেজির বেশি রুই, কাতলা ধরা পড়ত। এখন সপ্তাহে পাঁচ কেজি মাছও ধরা পড়ে না। পাঁচ বছর আগেই তোর্সা থেকে সপ্তাহে ১৬২ কেজি বোরেলি মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় ৬০ কেজির মতো। বোরেলি মাছ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বোরেলি উৎসব করেছে মৎস্য দফতর।

মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, নদীর মাছের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় মৎস্যজীবীদের একাংশ নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরেন। ফলে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। মাছ জলের উপরে ভেসে ওঠে। অনেক সময় বিদ্যুতের মাধ্যমেও নদীতে মাছ শিকার করা হয়। ছোট ছোট মাছ ধরার পাশাপাশি কোনও মাছের পেটে ডিম থাকলেও তা ধরে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে ওই অবস্থা চলার ফলে মাছ কমতে শুরু করে নদীতে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “নদীর মাছ বাড়াতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। মৎস্যজীবীদের সহযোগিতা দরকার। আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE