Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভবিষ্যতের দিশার খোঁজে গনির গড়ের চার প্রার্থী

একজন দু’বারের বিধায়ক। কিন্তু দল পাল্টেও আসন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। আর একজন দলের জেলা সভাপতি হয়েও হেরেছেন। আবার যে মালদহে গনিখানের নামে ভোট হয়, হেরেছেন সেই গনি পরিবারের এক সদস্যাও।

(বাঁ দিক থেকে) মোয়াজ্জেম হোসেন, সৌমিত্র রায়, শেহনাজ কাদরি, তজমুল হোসেন।

(বাঁ দিক থেকে) মোয়াজ্জেম হোসেন, সৌমিত্র রায়, শেহনাজ কাদরি, তজমুল হোসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০২:৩৮
Share: Save:

একজন দু’বারের বিধায়ক। কিন্তু দল পাল্টেও আসন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। আর একজন দলের জেলা সভাপতি হয়েও হেরেছেন। আবার যে মালদহে গনিখানের নামে ভোট হয়, হেরেছেন সেই গনি পরিবারের এক সদস্যাও। চতুর্থজন পরিচিত মুখ, নামী গায়ক। মালদহের চাঁচল মহকুমার চারটি আসনেই শাসক দলের চার হেভিওয়েট প্রার্থীর কেউই বিধানসভায় যাওয়ার টিকিট জোগার করতে পারেননি।

ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই ওই পরাজিত প্রার্থীরা কার্যত নিঃসঙ্গ হয়েই রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। ফলে দলের কাছেও তাঁরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। চার প্রার্থীই ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী, ফের কী তাঁরা ফিরবেন নিজেদের পেশায়। তা নিয়েও দলের অন্দরে-বাইরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

যদিও আপাতত তাঁরা দিদির দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। কেননা হারলেও এ বারই প্রথম গনিখানের গড়ে তাঁরা ভাঙন ধরাতে পেরেছেন। তাই সাংগঠনিক বা সরকারি অন্য কোনও পদ জুটলেও জুটতে পারে বলে আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তাঁদের ঘনিষ্ঠরা।

মালতীপুর থেকে পরাজিত হয়েছেন দলের জেলা সভাপতি। এর মধ্যে কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মোয়াজ্জেম হোসেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি কথা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও তিনি বলেন, ‘‘মালদহ কংগ্রেসের গড়। এ বার আবার সিপিএম ও কংগ্রেস জোট হওয়ায় লড়াই কঠিন ছিল। তারপরেও লোকসভার তুলনায় ১০০ শতাংশ ভোট বেড়েছে। এবার আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী।’’

নির্বাচনের কিছুদিন আগেই ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে শাসক দলে যোগ দিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের দু’বারের বিধায়ক তজমুল হোসেন। জনভিত্তির কথা ভেবে ওই আসনেই প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ওই আসনে জোট না হওয়ার সুযোগও নিজের পক্ষে টেনে রাখতে পারেননি তৃণমূল প্রার্থী। ফলে তিনি হরিশ্চন্দ্রপুরের অবিসংবাদী নেতা বলে যে মিথ ছিল তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। আর এখানে তৃণমূলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একইভাবে মালতীপুরে হেরেছেন মোয়াজ্জেম হোসেনও। তিনি জেলা সভাপতি। তাই তাঁর পরাজয়ের পাশাপাশি জেলায় দল খাতা খুলতে না পারায় সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরপরেও তাঁকে সংগঠনের দায়িত্বে রাখা হবে কি না তা নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। আবার রতুয়ায় হারতে হয়েছে গনিখানের ভাগ্নি তথা ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার শেহনাজ কাদরিকেও।

মালদহে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা কারও অজানা নয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই কি ফল খারাপ হয়েছে দলের? জেলা সভাপতি তা অবশ্য মানতে চাননি। তবে চাঁচলের গায়ক প্রার্থী সৌমিত্র রায়ের কথায় অবশ্য সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ইঙ্গিত মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলয়ের মানুষজনের মধ্যে অন্যতম সৌমিত্রবাবু। কিন্তু সেই সৌমিত্রবাবুই পরাজয়ের পর ‘আর রাজনীতি নয়’ বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেছিলেন। এ দিন অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য যখন আলোয় ঝলমল করছে তখন মালদহ অন্ধকার। সেই অভিমান থেকেই ফেসবুকে ওই মন্তব্য করেছিলাম।’’

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই কি হার? মালদহে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ রাজনীতিতে তিতিবিরক্ত সৌমিত্রবাবুর গলায় অভিমানের স্বর স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘কেন এমন হল সেটা নেতৃত্ব খতিয়ে দেখুক। রাজনীতি ছাড়ছি না। তবে মালদহের রাজনীতি থেকে আমাকে মুক্তি দিন এই অনুরোধটুকু দিদির কাছে রাখব। তারপরেও দিদি যদি কোনও দায়িত্ব দেন তা মাথা পেতে নেব।’’

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

candidates Mamata Banerjee cpm congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE