মুক্তি: বের করে আনা হচ্ছে জোসেফকে। ছবি: নারায়ণ দে
দশ বছর বয়স থেকেই ঘরবন্দি। পনেরো বছর পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে বার করে আনল এক যুবককে। জোসেফ খাড়িয়া নামে ওই যুবকের তখন চেহারা দেখে আঁতকে ওঠেন সকলে। কঙ্কালসার জোসেফকে তাঁর মা বীণা খাড়িয়াই ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন দমনপুর এলাকায় এই ঘটনার পরে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে-র বাড়ির ঘটনাও।
বীণা খাড়িয়ার বাড়িতে তিনি ও তাঁর ছেলে ছাড়া কেউ থাকেন না। জঙ্গলে ঘেরা এলাকা। খুব কাছাকাছি আর কারও বাড়িও নেই। বনে কাঠ, শাক-পাতা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালান বীণাদেবী। বীণাদেবীর প্রতিবেশী স্বপ্না ভট্টাচার্য জানান, বীণাদেবী ঘর থেকে একাই বের হতেন। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। কেউ কথা বলতে চাইলে বিরক্ত হতেন। তাই তাঁকে কেউ কোনওদিন ঘাঁটাতেও চাননি। এলাকার বাসিন্দা দীপ দে সরকার কৌতুহলী হয়ে খোঁজখবর নেন। তারপরই জানা যায়, জোসেফ ঘরেই থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা রাতুল বিশ্বাসকে তিনি সব কথা জানান। রাতুলবাবু গোটা ঘটনাটি ‘ফেসবুক’-এ দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য চাইলে জনমত তৈরি হয়। এরপরে বিষয়টি জানানো হয় আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথকেও। তারপরে সবাই গিয়ে ঘর থেকে বীণাদেবীকে সরিয়ে জোসেফকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। জোসেফ তখন দাঁড়াতেও পারছিলেন না। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এক যুবক দীর্ঘদিন ঘরবন্দি বলে অভিযোগ এসেছিল। তাঁকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল। সেটা করা হয়েছে। কী কারণে এমন হয়েছে, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা অ্যালবার্ট সাংমা জানান, বীণাদেবীর বর ছেলের জন্মের আগে তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। জোসেফ স্থানীয় স্কুলে পড়ত। বছর পনেরো আগে জোসেফের দাদু, বীণার বাবা মতিহার খাড়িয়া মারা যান। তার পর থেকেই ছেলে ঘর থেকে বের করত না মা। ধীরে ধীরে অনেকেই বিষয়টি ভুলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন যখন ঘরে ঢুকে ছেলেটিকে বার করি, জোসেফ কাঠের ভাঙাচোরা ঘরের এক কোণায় চুপচাপ বসে ছিল। ওর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না।’’
আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, ‘‘ওই ছেলেটি ও তাঁর মায়ের চিকিৎসা হচ্ছে। তাঁদের কাউন্সেলিং করানো হবে।’’ আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রদেশ সভাপতি তথা রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বীরসা তীরকে বলেন, ‘‘আদিবাসী সমাজে কাউকে ঘরবন্দি করে রাখার কোনও বিধান নেই।’’ আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy