Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
সরব অশোক

গৌতমের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের দাবি

সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বিরোধী দলের প্রার্থী-কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে মন্ত্রীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাল বামেরা।

আঠারোখাইতে দলীয় দফতরে অশোক ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।

আঠারোখাইতে দলীয় দফতরে অশোক ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বিরোধী দলের প্রার্থী-কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে মন্ত্রীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাল বামেরা।

সুষ্ঠু ভাবে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট করাতে হলে মন্ত্রীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে দাবি করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। কেন মন্ত্রীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন তার ব্যাখ্যাও এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অশোকবাবু জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মহকুমা পরিষদের ভোটের প্রচার শুরু হতেই মন্ত্রী গৌতমবাবু পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বাম প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। মিথ্যে অভিযোগে সিপিএম সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকী মন্ত্রীর সঙ্গে যাঁরা থাকেন, তাঁদের কয়েকজন বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ান বলেও বাসিন্দাদের অনেকে অভিযোগ করেছেন।’’ তাঁর দাবি, সে কারণেই মন্ত্রী গৌতমবাবু ভোট পর্যন্ত যাতে সরকারি আধিকারিকদের কোনও নির্দেশ না দিতে পারেন, কোথাও গিয়ে প্রভাব বিস্তার না করতে না পারেন তার জন্যই কমিশনকে তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে কমিশন কোনও পদক্ষেপ না করলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন অশোকবাবু।

এ দিন সন্ধ্যায় মাটিগাড়ার আঠারোখাই পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন অশোকবাবু ও সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার সহ অন্য নেতারা। গত শনিবার এই পার্টি অফিসেই তৃণমূল হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। পার্টি অফিসের একতলার আসবাব পত্র, ফ্লেক্স এখনও ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। অফিসের দোতলায় দলের প্রার্থী, এজেন্ট সমর্থকদের নিয়ে সভা করার পরে সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যেই সকলকে বাইরে ডেকে এনে দলীয় পতাকা ধরে ভয় না পাওয়ার শপথ পড়ান অশোকবাবু-জীবেশবাবুরা। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি গৌতমবাবু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কমিশনে যাওয়াকে স্বাগত। তবে আমার নাগরিক অধিকার হরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি শহরের মেয়রের থেকে রাজনৈতিক আক্রমণ প্রত্যাশা করি, কিন্তু উনি এমন কুরুচিপূর্ণ কথা কেন বলবেন।’’ গৌতমবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সরকারে থেকে অশোকবাবুরাই একসময়ে বিরোধীদের খুন করেছেন। এখন নিজেরা আয়নায় মুখ দেখুন। আমি অতীতে বহুবার সিপিএমের গুন্ডা এবং পুলিশের হাতে মার খেয়েছি। মাফিয়া রাজনীতিকে আমি উপেক্ষা করি।’’

গত শনিবার থেকেই মাটিগাড়ায় তৃণমূল-সিপিএম দু’দলের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে তেতে উঠেছে শিলিগুড়ি। তৃণমূল নেতা দুর্লভ চক্রবর্তীর উপর গুলি চালিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে গত শনিবার। তারপরেই আঠারোখাই এলাকার সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা এবং কর্মীদের মারধরের পাল্টা অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অভিযোগে গত রবিবার দুই সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের থেকে অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। গত রবিবার রাতে বিধাননগরের এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীর বাড়িতে বোমা ছুড়ে হামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বামেদের উপর হামলা হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে বামেদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, উল্টে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা, হয়রানি করা হয়েছে। সেই অভিযোগ জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে জানিয়েছিল বামেরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাশাসক শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্টও চেয়েছেন। যদিও, এ দিন জীবেশবাবু বলেন, ‘‘সেই পদক্ষেপেও আমাদের ভরসা নেই। এরপরেও মন্ত্রীর নির্দেশে হুমকি ভয়, দেখানো চলবে, তাই মন্ত্রীর গতিবিধির নিয়ন্ত্রণ চেয়েছি।’’

সোমবার সন্ধ্যায় আঠারোখাইয়ের পার্টি অফিসে তৃণমূলের ‘ভোট লুঠ’ রুখতে বিরোধী দলগুলির সমর্থকদের এক হয়ে প্রতিরোধের কথাও বলেছেন জীবেশবাবুরা। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা ভোট যাকেই দিন না কেন, এক হয়ে তৃণমূলের ভোট লুঠ আটকাতে হবে। পাল্টা প্রতিরোধ করতে হবে।’’ এরপরেই দলের প্রার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে জীবেশবাবু বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, ভয় করার কোনও জায়গা নেই। বুক চিতিয়ে এগোতে হবে।’’

অশোকবাবুকে সামনে রেখে শিলিগুড়ি পুরসভায় বোর্ড দখল করেছে বামেরা। সেই মডেলকে বিধাননগর পুরসভার ভোটেও সামনে রেখেছে বামেরা। এ দিন অশোকবাবু আঠারোখাই পার্টি অফিসে, দলের প্রার্থীদের কাছে জানতে চান, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন কি না। সমস্বরে ‘না’ জবাব শুনে অশোকবাবুর পরামর্শ, ‘‘প্রতি এলাকায় বুথ অফিস খুলুন। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে একাধিকবার যান। তৃণমূল হামলা করতে এলে সকলে মিলে রুখে দাঁড়ান।’’ এরপরেই সকলকে নীচে নামিয়ে অফিসের উঠোনে দাঁড় করিয়ে ‘ভয় পাব না, রুখে দাঁড়াব’-র শপথ পড়ানো হয়। নিজেই স্লোগান দেন অশোকবাবু। তখন তুমুল বৃষ্টি। সহকর্মী ছাতা এগিয়ে দিলেও সরিয়ে দেন অশোকবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE