Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাণ চেয়ে ক্ষোভ বাড়ছে

এদিন প্রশাসনিক বৈঠক করে সেচমন্ত্রী জেলাশাসককে আলু কিনে বানভাসি এলাকায় বিলি করতে বলেছেন। পরে সেচমন্ত্রী জানান, জেলার সব নদীর জল চুড়ান্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

সেতু: ভেঙে পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বাংরুয়া সেতু। বন্ধ যোগাযোগ। নিজস্ব চিত্র

সেতু: ভেঙে পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বাংরুয়া সেতু। বন্ধ যোগাযোগ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৬
Share: Save:

বন্যা পরিস্থিতির যতই অবনতি হচ্ছে, বাড়ছে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। ত্রাণ চেয়ে কোথাও বিডিও অফিসে ভাঙচুর চালালেন দুর্গতরা, কোথাও রাস্তায় বসে অবরোধ করলেন জলবন্দিরা। কোথাও আবার মন্ত্রীকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাসিন্দারা, কোথাও আবার মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ত্রাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে নৌকা না মেলা, বাঁধে ক্ষতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে।

বিক্ষোভ বালুরঘাটে

বুধবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের বানভাসি মানুষ বিডিও অফিস চত্বর থেকে খাদ্যসামগ্রী লুঠ করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। সে সময় বিডিও অফিসের গুদাম থেকে ট্রাক্টরে চাল ও চিঁড়ের বস্তা ওঠানো হচ্ছিল। বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প রাস্তার সেতুও জলের তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় সড়কপথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর। বুধবার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাতেই ছিলেন। তপন ব্লকের আমতলি থেকে মালদহের নালাগোলা পর্যন্ত রাজ্য সড়কে আমতলির সেতু ভেঙে পড়ে। সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে নালাগোলা সেতু মেরামত করে যানচলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা জুড়ে বিধ্বস্ত নদীবাঁধ মেরামত করা হবে।’’ বন্যার জলে ডুবে এ দিন বালুরঘাটের ডাঙা অঞ্চলের মাধবপাড়ায় শ্যামল মার্ডি (৪২) নামে এক খেতমজুরের মৃত্যু হয়েছে। বংশীহারি থানার রাজীবপুর এলাকায় সাপের ছোবলে মারা গিয়েছেন মাধুরী ওঁরাও (২৫) নামে এক বধূ। এদিন প্রশাসনিক বৈঠক করে সেচমন্ত্রী জেলাশাসককে আলু কিনে বানভাসি এলাকায় বিলি করতে বলেছেন। পরে সেচমন্ত্রী জানান, জেলার সব নদীর জল চুড়ান্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

অবরোধ মালদহে

হরিশ্চন্দ্রপুর ২, চাঁচল ১ ও ২, বামনগোলা ব্লকগুলিতে ত্রাণের জন্য বানভাসিদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা। অভিযোগ, ত্রাণ না মেলায় এ দিন দুপুরে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের বিডিও অফিসে ভাঙচুর চালায় একদল উত্তেজিত বানভাসি মানুষ। বানভাসিদের উদ্ধার ও ত্রাণের দ্রুত ব্যবস্থা করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এ দিন চিঠি দিয়েছেন উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নূর। মালদহে ফুলহার চরম বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। বুধবার সকাল থেকে মহানন্দা নদীর জলও বিপদসীমা পার করল। বাড়ছে গঙ্গারও জল। মহানন্দার জলে চাঁচল ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পাশাপাশি টাঙন ও পুনর্ভবার জলে গোটা বামনগোলা ব্লক ও গাজল ব্লকের একাংশ এলাকাও প্লাবিত হয়ে গোটা উত্তর মালদহে বন্যা হয়ে যায়। সব থেকে মারাত্মক অবস্থা হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের। এখানকার সাদলিচক, সুলতাননগর, মালিওঁর ১ ও ২, ইসলামপুর, দৌলতনগর এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলি জলের তলায় চলে গিয়েছে। এলাকার বানভাসিদের অভিযোগ, জল বাড়তে থাকলেও প্রশাসনের তরফে উদ্ধার কাজ সে ভাবে হচ্ছে না। চাঁচল ১ ব্লকের মল্লিকপাড়া, হারিয়ান, আশাপুর প্রভৃতি এলাকায় মহানন্দা নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বাংরুয়া সেতু। বুধবার বিকালে ওই সেতু জলের তোড়ে ভেঙে পড়ায় হরিশ্চন্দ্রপুর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চাঁচল হয়ে মালদহ-হরিশ্চন্দ্রপুর সরাসরি সড়ক যোগাযোগও বুধবার বিকেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

বাঁধভাঙা দুর্দশা

মালদহ

দুর্গত: তিন লক্ষাধিক

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

কোচবিহার

আলিপুরদুয়ার

দুর্গত: আড়াই লক্ষ

মৃত্যু: ১ জন

জাতীয় সড়কে ভাঙচুর

বিহারের কিসানগঞ্জ এলাকার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালীন বন্যা দুর্গতরা শিলিগুড়ি থেকে রায়গঞ্জগামী একটি বেসরকারি বাসের কাচ ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর গোলমালের আশঙ্কায় দীর্ঘক্ষণ গোয়ালপোখর ও চাকুলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকার জাতীয় সড়কে বাস আটকে দেয় পুলিশ। বৃষ্টি না থাকলেও, বিভিন্ন নদীর জল নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে উত্তর দিনাজপুরে। বুধবার সকাল থেকে রায়গঞ্জ, ইটাহার ও করণদিঘি সহ উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। গত তিন দিন ধরে রায়গঞ্জের কুলিক নদীর জল উপছে একনাগাড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে শহরে ঢুকছে। ফলে মঙ্গলবার রাত থেকে শহরের মিলনপাড়া, তুলসিপাড়া, শক্তিনগর, রমেন্দ্রপল্লি, কাঞ্চনপল্লি, বন্দর, সুভাষগঞ্জ সহ বাহিন, মাড়াইকুড়া, গৌরি, কমলাবাড়ি, বীরঘই, মহীপুর ও বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় কোথাও কোমর আবার কোথাও হাঁটু সমান জল জমে গিয়েছে। বিভিন্ন নদীর জল উপছে রায়গঞ্জ, করণদিঘি ও চাকুলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকার ৩৪ ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে। তবে জাতীয় সড়কে জলের স্রোত কম থাকায় শিলিগুড়ি রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে মালদহের গঙ্গা ও ফুলহার নদী উপচে সেই জল ইটাহারের মহানন্দা ও সুঁই নদীতে আসতে শুরু করায় ওই দুটি নদীর জল কোথাও উপছে আবার কোথাও বাঁধ ভেঙে ইটাহার ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। ইটাহারের গোটলু ও কালোমাটিয়া এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বিভিন্ন নদীর জল বইতে শুরু করায় এ দিন রায়গঞ্জ থেকে মালদহ ও কলকাতা রুটের যানবাহন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Flood hit area Relief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE