অটল: অপু রক্ষিত।
বাবা ক্যাটারিং সংস্থায় রাঁধুনির কাজ করেন। বাড়ি বলতে রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় এক চিলতে ঘর। তাও নিজের নয়। সেখানে থেকেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে মাধ্যমিকে প্রায় ৭৯ শতাংশ পেল ইসলামপুরের ক্ষুদিরামপল্লি সুকান্ত স্মৃতি বিদ্যাপীঠের অপু রক্ষিত।
বাড়ির বড় ছেলে অপু ছোটবেলা থেকেই বাবামায়ের কষ্ট দেখে এসেছে। তার ইচ্ছে বড় হয়ে সরকারি আমলা হওয়ার। কিন্তু ভিত শক্ত না হলে সেই চাকরি পাওয়া যে কঠিন তা পরিবারের লোকেদের কাছ থেকেই জানতে পেরেছিল অপু। সেই থেকেই বাবা, মা, বোনকে স্বচ্ছল জীবনে ফেরাতে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও বেড়ে যায়। তবে বাবার রোজগার তেমন না থাকায় টিউশন নিতে পারেনি। তাদেরই এক পরিচিত তাকে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। বাবা সুশান্ত রক্ষিতের কথায়, ‘‘প্রতিদিনই তো আর রান্নার কাজ থাকে না। অনুষ্ঠান বাড়ি হলেই রান্নার কাজে ডাক পড়ে। যা রোজগার হয় তাতে সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন।’’
মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৯। ইংরেজি বাদে প্রতিটি বিষয়ই পেয়েছে ৮০ শতাংশ। ইংরেজিতেও পেয়েছে ৭৩। তবে প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েও বিঞ্জান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে নেই তার। অপু বলল, ‘‘ভূগোল আমার প্রিয় বিষয়। কাজেই কলা বিভাগে পড়াশোনা করে ভূগোলে অনার্স করতে চাই।’’ তার পর অপুর ইচ্ছে আমলা হওয়ার, যাতে এলাকার দুঃস্থ লোকেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে মাধ্যমিকের পর ছেলেকে পড়াবেন কী ভাবে, তা নিয়েই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে মা রমাদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন নিচু ক্লাস ছিল। নিজে বাড়িতে পড়ে বা স্কুলের পড়ানোতেই হয়ে যেত। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে খরচ অনেক। কোনও সংস্থা যদি এগিয়ে আসে, তা হলে ছেলেটা মন দিয়ে পড়তে পারে।’’
অপুর ফলে বেশ খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের বাধ্য ছেলে সে। যখনই পড়াশোনা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে, শিক্ষকদের কাছে বুঝে নিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকেও নিজের স্কুলেই পড়তে চায় অপু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy