Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অশান্তির জের, থমকাল রাস্তাও

বাগডোগরা থেকে নকশালবাড়ি যাওয়ার এশিয়ান-২ হাইওয়ের ডানপাশেই কিরণচন্দ্র চা বাগান। মঙ্গলবার বিকেলে হাজিরা নিয়ে গোলমালে দুই শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ উঠে বাগানের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। রাতভর দফতরে ভাঙচুর, ঢিলবৃষ্টি, আগুন ধরানোর চেষ্টা কোনও কিছুই বাদ যায়নি।

থমকে: অবরুদ্ধ রাস্তায় বাসের সারি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

থমকে: অবরুদ্ধ রাস্তায় বাসের সারি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
নকশালবাড়ি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৫:২১
Share: Save:

তরাইয়ের কিরণচন্দ্র চা বাগানের শ্রমিক-কতৃর্পক্ষের গোলমালের আঁচ পড়ল রাস্তাতেও। বুধবার দু’দফায় প্রায় ১১ ঘণ্টা শিলিগুড়ি থেকে নেপালগামী এশিয়ান হাইওয়ে-২ বন্ধ থাকল নকশালবাড়ির কিরণচন্দ্র চা বাগান এলাকায়। দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে থাকায় চরম ভোগান্তি হয় অসংখ্য যাত্রীর।

বাগডোগরা থেকে নকশালবাড়ি যাওয়ার এশিয়ান-২ হাইওয়ের ডানপাশেই কিরণচন্দ্র চা বাগান। মঙ্গলবার বিকেলে হাজিরা নিয়ে গোলমালে দুই শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ উঠে বাগানের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। রাতভর দফতরে ভাঙচুর, ঢিলবৃষ্টি, আগুন ধরানোর চেষ্টা কোনও কিছুই বাদ যায়নি। ঢিলে এক নাবালিকাও জখম হয়। ভোর ৩টা পর ম্যানেজার-সহ ৫ কর্মীকে শ্রমিকদের সঙ্গে রীতিমত ধস্তাধস্তি করে বার করে নকশালবাড়ি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জখম হন একাধিক পুলিশকর্মী। ভোরেই অবরোধ শুরু হয়ে যায়।

প্রথম দফায় ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে রাস্তা। একপ্রস্থ আলোচনার পর ফের বিকেল ৪টে থেকে ৭টা অবধি অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। তাঁরা দাবি তোলেন, বাগান মালিক ও ম্যানেজার ঘটনাস্থলে না আসলে অবরোধ চলবে। রাতে হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও প্রশাসনের বৈঠকে সমাধানসূত্র মেলে। বিডিও কিংশুক মাইতি বলেন, ‘‘বাগান খুলে ম্যানেজারকে সরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তফশিলি নির্যাতন রোধ আইনে মামলা, জখমদের চিকিৎসার আশ্বাস দেওয়ায় রাতে ওই অবরোধ উঠে যায়।’’

মনিম লাকড়া, বুধু ওঁরাও, সুরজ মিনজ বা গঙ্গা কুরনির মতো শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘‘বাগানের ম্যানেজার নিজেকে রাজা মনে করেন। বাচ্চারা লিচু পাড়লেও মারেন। গালিগালাজ, চড় থাপ্পড় বা লাঠিপেটা তো লেগেই আছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিক পরশ কুরনি হাজিরা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে থাপ্পড় মারা হয়। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে লাঠি দিয়ে চোরের পর পেটানো হয়েছে। বুধুরাম ওঁরাও নামের আরেক শ্রমিককে মারা হয়েছে। ম্যানেজার প্রত্যুষ গঙ্গোপাধ্যায় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের একাংশই পরিস্থিতি ঘোরাল করেছেন। প্রশাসন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’

শ্রমিকেরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যে তাঁরা বাগানের ভিতর তির ধনুক নিয়ে বসা ছাড়াও লাঠি, লোহার রড ও দুই হাতে পাথর নিয়ে রাস্তা উঠে অবরোধ করতে থাকেন। সাইকেল পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি। বিপাকে পড়েন বহু নিত্যযাত্রী। শ্রমিকেরা পুলিশে অভিযোগ করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার শ্রম দফতরে বৈঠকও ডাকা হয়েছে। ডিএসপি সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা হঠিয়ে দেওয়ার রাস্তায় যেতে চাইনি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়েছে।’’ ছিলেন দার্জিলিং জেলা পুলিশের তিনটি থানার ওসি-সহ বিরাট পুলিশ। পাহাড়ে সমতলের পুলিশ ফোর্স বেশিরভাগ চলে যাওয়ায় রিজার্ভে রাখা কলকাতা ও পুরুলিয়া পুলিশ দিয়ে দিনভর পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। বুধবার বাগানের ভিতরে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাগানে কাজ না হলেও মালিকপক্ষ কোনও লকআউটের ঘোষণা করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE