পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা তো সকাল থেকেই নজর রেখেছিলেন মোর্চার সর্বদল বৈঠকে। তাঁদের থেকেও বেশি উৎকণ্ঠায় ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। আশা ছিল, অনির্দিষ্টকালের বনধ হয় উঠবে নইলে কিছু ছাড় তো মিলতেই পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালিম্পঙের পেডং থেকে বন্ধ চালিয়ে যাওয়ার মোর্চার ঘোষণার পর হতাশা ছেয়েছে ব্যবসায়ী মহলে।
তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, পাহাড়ের বন্ধ ২৩ দিনে পড়ল। দার্জিলিং ও সিকিম নির্ভর শিলিগুড়ির রোজকার ব্যবসার ৭৫ শতাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমন চলতে থাকলে বড় ব্যবসায়ীরা তো কিছুটা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও ছোট ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়। সরকারি হিসাবে সমস্ত ধরনের ব্যবসা মিলিয়ে শহরে রোজ ১২/১৩ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা সত্যিই সমস্যায় আছেন। আন্দোলন, রাজনীতি সেগুলি আলাদা জায়গায়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা তো প্রতিদিন মালপত্র বিক্রি করে সংসার চালান। তাঁদের কী অবস্থা হচ্ছে, ভাবাই যায় না।’’
শহরের নয়াবাজার, চম্পাসারি পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সময় গোটা উত্তরবঙ্গ, সিকিম, অসম, ভুটান বা নেপালের ব্যবসা সবটাই চলত শিলিগুড়ি থেকে। ধীরে ধীরে ডুয়ার্সের মালবাজার, ধূপগুড়ি, কোচবিহার, ময়নাগুড়ি, ফালাকাটায় বড় পাইকারি বাজার গড়ে ওঠায় শিলিগুড়ির ব্যবসা মূলত পাহাড় নির্ভর হয়ে দাঁড়ায়। চাল, ডাল, আনাজপাতি থেকে নির্মাণ সামগ্রী, হার্ডওয়্যার, যন্ত্রাংশ-সহ সব কিছুই পাহাড়ে শিলিগুড়ি থেকে যায়। বনধে দার্জিলিং বন্ধ থাকায় প্রথমে কিছুটা ব্যবসা কমে। কিন্তু এর প্রভাব সিকিমে পড়তেই আরও মন্দা শুরু হয়েছে। পুজোর বাজারের এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেবক রোড, দুই মাইল এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, রাতের অন্ধকারে কিছু কিছু মালপত্র একাংশ ব্যবসায়ী পাহাড়ের লোকজনের কাছে বিক্রি করলেও তা মোট ব্যবসার তুলনায় খুবই নগণ্য। তা দিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে কোনও প্রভাব পড়ে না। গাড়ি চলছে না। সমস্ত পাইকারি বাজারগুলি সারা দিন সুনসান থাকছে। নর্থবেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুয়াল বন্ধ তোলার সপক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী তো বটেই মানুষের বিরাট সমস্যা হচ্ছে। আন্দোনকারীদের বিষয়টি বোঝা উচিত।’’
চম্পাসারি পাইকারি আনাজপাতি, মাছ বাজার নিয়ে সমস্যায় ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিন ধরে পুলিশ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রসদের গাড়ি পরীক্ষার কাজও শুরু করেছে। তাতে অস্পবিস্তর সিকিমের গাড়ি আসলেও তা কমছে। হোলসেল ফিস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাপি চৌধুরী বলেন, ‘‘পাহাড় তো বন্ধই। স্থানীয় স্তরেও সমস্যা বাড়ছে। হোটেল, রেস্তোরাঁয় লোক কম থাকায় বিক্রি একে নিম্নমুখী। বড় সমস্যায় সবাই।’’
এই পরিস্থিতি এদিন বিকালে সমতলের সুকনায় নেপালি পোশাক পড়ে বিরাট মিছিল করেছেন মোর্চার কর্মী সমর্থকেরা। সুকনাতেও পুরোদস্তুর বনধ চলছে। দলের তরাই-এর সভাপতি সুরেন প্রধান বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy