Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
চন্দনার হরেক কীর্তি

ব্যাঙ্ককেও যেত পাচার শিশু

জলপাইগুড়ির সেই হোম থেকে ব্যাঙ্ককেও কয়েকটি শিশু পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করছে সিআইডি। ধৃতদের জেরা করে ও নথি পরীক্ষার পরে সিআইডির সেই সন্দেহ জোরালো হয়েছে।

এই সেই হোম। — নিজস্ব চিত্র

এই সেই হোম। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

জলপাইগুড়ির সেই হোম থেকে ব্যাঙ্ককেও কয়েকটি শিশু পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করছে সিআইডি। ধৃতদের জেরা করে ও নথি পরীক্ষার পরে সিআইডির সেই সন্দেহ জোরালো হয়েছে। সিআইডির সন্দেহ, বিদেশে যাদের হাতে শিশুদের তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা কেউই ভারতীয় নন।

ওই বিদেশি দম্পতিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রাথমিক আলোচনা শুরু হতো ওয়েবসাইটেই। সিআইডির এক অফিসার জানান, দিল্লিতে কয়েকটি শিশুর হাতবদল হয় বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। সিআইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিদেশে পাচার সংক্রান্ত তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। যদিও চন্দনা চক্রবর্তীর আইনজীবী গৌতম পাল দাবি করেন, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলেই তার ভিত্তিতে তাকে দোষী ভাবাটা কখনও যুক্তিসম্মত নয়। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুই যে নিয়ম মেনে হয়েছে, তা আদালতেই প্রমাণ হয়ে যাবে।’’

জলপাইগুড়ির নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট কমিটির বিমলা শিশুগৃহে অভিযান চালিয়ে শনিবার হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী, কর্মী সোনালি মণ্ডলকে সিআইডি গ্রেফতার করে। হোমটি সিল করে দেওয়া হয়। তবে তার আগে সংস্থার তিনটি হোমে হানা দিয়ে প্রচুর নথি উদ্ধার করেছে সিআইডি। নথিতে অসঙ্গতি মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

হোমের এক একটি রেজিস্টারে একই দিনে শিশু আবাসিকদের সংখ্যা এক একরকম লেখা রয়েছে বলে অভিযোগ। হোমের দত্তক বিষয়ক আধিকারিক সোনালি গাড়ি ব্যবহারের বিল, কোথায় তিনি যেতেন, তা নিয়েও বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে।

মাসে দু’বার প্রতিটি হোম পরিদর্শন করার কথা শিশু সুরক্ষা কমিটির। হোমে কোন শিশু আসছে, কোন শিশুকে দত্তক দেওয়া হচ্ছে— তা নিয়মিত নজরদারি করার কথা জেলা প্রশাসনের। তার পরেও কী ভাবে জলপাইগুড়ির হোম থেকে দত্তকের নাম করে শিশু পাচার সম্ভব হল, তা খতিয়ে দেখছে সিআইডি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এর মধ্যেই জলপাইগু়ড়ি জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে শো কজ করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে সিআইডির দাবি, কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে দত্তকের নাম করে হোম থেকে শিশু পাচার চলছে। তবে কি দিনের পর দিন প্রশাসন এবং বিভিন্ন সরকারি কমিটির নজরদারির বাইরেই থেকে গিয়েছিল জলপাইগুড়ির হোম? এই প্রশ্নের উত্তর মিললেই চক্রে জড়িত আরও কিছু ব্যক্তির নাম পাওয়া যাবে বলে সিআইডির দাবি।

সিআইডি সূত্রে খবর, হোমের নথিতে দেখা গিয়েছে গত বছর জুলাইয়ে মাধুরী এবং ঋতু নামে দুই শিশুকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যে বৈঠকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাঁরা কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ।

২০১৫-১৬ সাল থেকে দত্তক সংক্রান্ত বৈঠক নিয়ে লেখার জন্য দু’টি রেজিস্টার ব্যবহার করা হতো। সেখানে শিশু সুরক্ষা ইউনিটের আধিকারিক অথবা প্রতিনিধির সই-ও থাকত না। প্রশ্ন উঠেছে মাসে দুবার করে যদি শিশু সুরক্ষা কমিটির পরিদর্শন হয়ে থাকে, তবে কেন এই অনিয়ম ধরা পড়েনি? উপরন্তু, ওই সংস্থার একটি হোমে শিশুদের সংখ্যায় গরমিল রয়েছে বলে সিডব্লুসি লিখিত ভাবে শিশু সুরক্ষা কমিটিকে রিপোর্ট দিয়েছিল। তা নিয়ে পদক্ষেপ হয়নি কেন? জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শাস্মিতা ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সংস্থা একটি হোমে দত্তক দেওয়ার জন্য শিশুদের রাখত। কাগজপত্র থাকত অন্য হোমে। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে গিয়ে আমরা নথিপত্র এক জায়গায় রাখার কথা বললেও শোনা হয়নি। আমরা সেই অসঙ্গতি জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট করেছি।’’ সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান বেবী উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা যা জানানোর প্রশাসন এবং শিশু সুরক্ষা কমিটিকে আগেই জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangkok Child trafficking Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE