বোমায় আহত জাহিরউদ্দিন। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
মালদহের বৈষ্ণবনগরের পর বোমাবাজির ঘটনা ঘটল কালিয়াচকেও। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ জমির দখল নিয়ে কালিয়াচক থানার রাজনগর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী ব্যাপক বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন তিন জন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভর দুপুরে গ্রামে বোমাবাজির ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। কালিয়াচকে বারবার সাধারণ ঘটনায় বোমা, গুলির ব্যবহার হওয়ায় এলাকায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন মোথাবাড়ির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, ‘‘এ দিন ভরদুপুরে আমার বিধানসভা কেন্দ্রে সামান্য জমির দখল নিয়ে বোমাবাজির ঘটনা ঘটল। বোমায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর এলাকা জুড়ে প্রায়ই বোমাবাজি, গুলির লড়াইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবুও পুলিশ কোন পদক্ষেপ করছে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। বোমা, গুলির ব্যবহার বাড়ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা খুব দ্রুত আন্দোলনে নামব।’’ মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদি বলেন, ‘‘জমি নিয়ে গোলমাল হয়েছিল। পুলিশ গেলে ঘটনাটি মিটে যায়। সব ঘটনারই তদন্ত চলছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বোমা কোথা থেকে আসছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
কালিয়াচক ২ ব্লকের রাজনগর গ্রামের নয়া গ্রামের বাসিন্দা মোজাফর শেখের সঙ্গে তাঁর খুড়তুতো ভাই বারিখুলের শেখের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ চলছে মাস দু’য়েক ধরে। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগর এলাকায় রাস্তার ধারে একটি পাঁচ বিঘার খাস জলা জমি রয়েছে। সেই জলা জমির পাট্টা মোজাফর শেখের নামে রয়েছে বলে দাবি তাঁর পরিবারের। তবে তাঁর খুড়তুতো ভাই বারিকুল জমিটি নিজের বলে দাবি করেন। বারিকুল পার্শ্ববতী কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা নিজেদের জমিতেই চাষবাস করেন। অভিযোগ, বারিকুল জমিটি অন্যত্র বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তবে বাধা দেন মোজাফর শেখেরা। গ্রামবাসীরাও জলা জমিটি বিক্রিতে বাধা দেন। জানা গিয়েছে, এই জলা জমিতে পাঠ পচানোর কাজ করেন অনেকে। তাই গ্রামবাসীরাও মোজাফরবাবুর পাশে দাঁড়ান।
এদিন দুপুরে কাঁঠালবাড়ি গ্রামের সাত থেকে আট জনের একটি দুষ্কৃতী দল গ্রামে ঢুকে বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা এবং মোজাফরবাবুর পরিবারের লোকেরা বাঁশ, লাঠি নিয়ে ধাওয়া করলে তাঁদের উপরেও বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে আহত হন মোজাফরবাবুর ছেলে জাহিরউদ্দিন শেখ, দুই গ্রামবাসী আবু শেখ, হামিদুর শেখ। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
আহতদের তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয় সীলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। আহতদের মধ্যে জাহিরউদ্দিনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকেরা বিকেলের দিকে তাঁকে স্থানান্তরিত করেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বাকিরা গ্রামীণ হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছে। মোজাফরবাবুর অভিযোগ, ‘‘বারিকুল জমির দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা বাধা দিয়েছি। তাই দুষ্কৃতীদের পাঠিয়ে গ্রামে বোমাবাজি করে জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো এলাকা থমথমে হয়ে রয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের সামাউন শেখ বলেন, ‘‘এক ব্যক্তির জমি দখল নিয়ে গ্রামে কিছু দুষ্কৃতী বোমাবাজি করে। বোমায় আহত হয়েছেন তিন জন। পুরো গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। পুলিশের কাছে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই বারিকুল গ্রাম ছাড়া রয়েছে। পুরো এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy