অভিযোগের তির।—নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটতেই সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পতাকা ঝোলানো এবং সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর একটি অফিস দখলের অভিযোগকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি। বাগডোগরায় গত রবিবার থেকে দফায় দফায় তাদের অফিস দখলের চেষ্টা চলছে বলে সিটু নেতাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, কখনও পতাকা ঝুলিয়ে, কখনও তালা মেরে আবার কখনও বা ভিতরের জিনিসপত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইরে রং করে আইএনটিটিইউসি অফিসও লিখে তা দখল করা হয়েছে।
একই ভাবে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তৃণমূল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে সিপিএম নেতাদের অভিযোগ। দুই ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটু নেতারা শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। তৃণমূলের তরফে অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে যা চলছে তার থেকে শিলিগুড়িও বাদ যাচ্ছে না। কর্মীদের ভয় দেখানো, সিটু দফতর দখল তো হচ্ছেই। আবার পুরসভার ছোট স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও পতাকা ঝোলানো হচ্ছে। পুলিশকে সব জানানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে তো আমরা দেখছি না। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে।’’
অফিস দখল প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতা তথা বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘দখলের কোনও বিষয় নেই। বাগডোগরার ওই সিটু কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানি। তাই তাঁরা দফতরের বোর্ড বদল করেছেন। আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিষয়টি কানে এসেছে। স্থানীয় নেতাদের তা খুলে দিতে বলেছি। সরকারি জায়গায় দলের কোনও জায়গা নেই। তবে এসব নিয়ে সিপিএমের নেতাদের আতঙ্ক, সন্ত্রাসের গল্প বানিয়ে লাভ নেই।’’
বাগডোগরার সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, এলাকার এয়ারপোর্ট মোড় লাগোয়া ক্ষুদিরামপল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে সিটুর ট্রাক চালকদের একটি দফতর রয়েছে। টিনের শেড দেওয়া দফতরটিতে চালকেরা বসতেন। গত রবিবার থেকে তৃণমূলের বাগডোগরা অঞ্চল কমিটির নেতৃত্বে দখল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে পতাকা ঝোলানো হয়। পরে আইএনটিটিইউসি-র নাম লেখা এবং শেষে তালা বদল করে নতুন তালা ঝোলানো হয়েছে। দলের নকশালবাড়ি জোনাল সম্পাদক শীতল দত্ত বলেন, ‘‘শুধু অফিস দখল নয়, সংগঠনের সাড়ে ৬ হাজার টাকাও লুঠ হয়েছে। বাগডোগরায় থানায় অভিযোগ জানিয়ে লাভ না হওয়ায় এ দিন পুলিশ কমিশনারকে সব জানানো হয়েছে।’’
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তোপ দেগেছেন সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে। তাঁরা জানান, প্রথমত ওই এলাকার ট্রাক চালকেরা বেশিরভাগই সিটু থেকে আইএনটিটিইউসিতে নাম লিখিয়েছেন। তাই তাঁরা নিজেদের অফিসের রং বদলে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে অফিসটি গত কয়েক বছর ধরে বন্ধই থাকত। একসময় গুদাম হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। চালকেরা নতুন সংগঠনে যোগ দিয়ে এখন দফতর পরিষ্কার করে বসছেন। এখন হঠাৎ করে দখল, টাকা লুঠের গল্প তৈরি করা হচ্ছে। শাসক দলের অঞ্চল সভাপতি প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘ওসব দখল করার আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা সেই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আর দখল করতে হলে বাগডোগরা সিপিএম অফিসই দখল করতাম। চালকেরা দল বদলেছেন, তাই দফতরে নিজেদের পতাকা লাগিয়েছেন। সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’’
এবার শিলিগুড়ি এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি দুটি কেন্দ্রেই জোট প্রার্থীরা জিতেছেন। বাম নেতাদের দাবি, দু’টি কেন্দ্র তো বটেই গোটা জেলায় তৃণমূল একটিও আসন পায়নি। কিন্তু রাজ্যে ২০০ বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসার পরেই অতি উৎসাহী তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বিভিন্ন এলাকায় এসব শুরু করেছেন। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উচিৎ বিষয়টি এখন সামাল দেওয়া। তা না হলে আগামীদিনের গোলমালের আশঙ্কা থাকবে। এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘সিপিএমের তরফে দফতর দখল, পতাকা ঝোলানোর মত অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy