Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
ধর্ষণ-খুনের বিচার চায় ধূপগুড়ি

পুলিশের তদন্ত নিয়েই গড়িমসির নালিশ

ধূপগুড়িতে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নিহতের পরিবার তো বটেই, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার ধূপগুড়িতে মিছিলও করেছেন। তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। কারণ, ওই ঘটনায় প্রথমে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ জমা পড়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

ধূপগুড়িতে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নিহতের পরিবার তো বটেই, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার ধূপগুড়িতে মিছিলও করেছেন। তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। কারণ, ওই ঘটনায় প্রথমে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু দেহটি রেললাইনে মিলেছে এই যুক্তি দেখিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ মামলা রুজু করেনি। রেল পুলিশকেই গণধর্ষণ ও খুনের মামলা করেছে। ওই মামলার অভিযোগে স্পষ্ট ভাবে ১৬ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে এক নাবালক সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

রেল পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাতে তহিরুল রহমান এবং হামিদুল আলি নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। সিপিএমের ধূপগুড়ির নেতাদের অভিযোগ, যে তহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর বাবার নাম ওসমান আলি। তিনি পেশায় মাংস বিক্রেতা এবং ধূপগুড়ি পুর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি সিপিএমের সাধারণ সমর্থক। কিন্তু যে তহিদুল রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বাবা আজিমুদ্দিদ এলাকার তৃণমূল নেতা। ধৃত হামিদুল আলির নাম অভিযোগ পত্রে নেই বলে সিপিএমের দাবি।

সিপিএমের ধূপগুড়ি জোনাল কমিটির সদস্য সঞ্জিত দে বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগের প্রতিলিপি রয়েছে। সেই অনুযায়ী ১৩ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা হল, চন্দ্রকান্ত রায়, গোবিন্দ ভৌমিক, অনিল বর্মন, সুরেন বর্মন, বিনোদ মণ্ডল, তহিরুল রহমান, প্রদ্যুত দাস, পরিমল বর্মন, বিশ্বনাথ রায়, বিকাশ বসাক, বিজয় বসাক, মহম্মদ জহিরুদ্দিন ও এক নাবালক।” সিপিএমের অভিযোগ, অনিলবাবুকে থানায় নিয়ে গিয়েও এক তৃণমূল নেতার চাপে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশি তদন্ত নিয়ে ধূপগুড়িতে আরও কিছু প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, বৃহস্পতিবার ধৃত ২ জনকে গ্রেফতার করে পাঠালেও মামলা ফিরিয়ে দিয়েছে জলপাইগুড়ি আদালত। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত দুপুর ২টো থেকে আড়াইটার মধ্যে মামলার নথি আদালতে জমা করতে হয়। এক্ষেত্রে মামলার নথি নির্ধারিত সময়ের ঘন্টাখানেক পরে জমা পড়ে। সে কারণেই এদিন মামলার শুনানি হয়নি বলে জানা গিয়েছে। এ ঘটনায় জেলা এবং রেল পুলিশ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। আদালতে চলে আসেন জেলার পুলিশ কর্তারাও। যদিও এদিন আদালত মামলা নথিবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়নি বলে জানা গিয়েছে। জেলা আদালতের সহকারি সরকারি আইনজীবী শান্তা চট্টোপ্যাধ্যায় বলেন, “এদিন দেরির কারণে মামলা আদালতে নথিবদ্ধ হয়নি। শুক্রবার পুলিশ সময় মতো নথি এবং ধৃতদের সময় মতো পাঠালে মামলার শুনানি হবে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি ‘আত্মহত্যা’র ধারনার কথা বললেও ওই রাতে সেই ছাত্রী কোন ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করে’, সেই ব্যাপারে পুলিশ কোনও তথ্য পায়নি। সাধারণত, লাইনে দেহ মিললে ট্রেনের চালকরা সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন। পুলিশ কিন্তু কোনও ট্রেনের চালকের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ ঝাঁপ দিয়েছে বলে তথ্য পায়নি। সেই সঙ্গে রেল পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রেললাইনের মধ্যে ওই ছাত্রীর বাঁ হাতটি পড়েছিল। বাকি দেহ খণ্ড-খণ্ড অবস্থায় লাইন থেকে প্রায় ৭-৮ মিটার দূরে ছিল। রেল পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার জানান, কেউ ঝাঁপ দিলে ট্রেনের চালক দেখতে পাবেনই। তা ছাড়া ঝাঁপ দিলে শুধু বাঁ হাত কাটা যাবে কেন, সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি। এই অবস্থায়, আজ, শুক্রবার ফরেনসিক বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE