টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা নদী সংলগ্ন সুকান্ত নগর কলোনি। ছবি: সন্দীপ পাল
একটানা বৃষ্টি চলতে থাকায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায়। তিস্তার জল বাড়তে থাকায় মালবাজার মহকুমায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জলঢাকা এবং কালজানি নদী বাঁধের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের প্রধান নদীগুলির জলস্তর বিপদ সীমার খুব কাছ দিয়ে বইছে। সিকিম এবং ভূটানে বৃষ্টি চলতে থাকায় নদীর জল আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মালবাজার মহকুমার অন্তত দু’হাজার বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে থাকায়, প্রশাসনের তরফে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। শিবিরে পানীয় জল মিলছে না বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন বাসিন্দারা। পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দোমহনীতে তিস্তা নদীর অংসরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি করে প্রশাসন৷ সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চব্বিশ ঘন্টায় জলপাইগুড়ি জেলাতেও বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৮১ মিলিমিটার৷
সোমবার সকাল থেকে ডুয়ার্সে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। যদিও, সোমবার রাতের পর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে নতুন করে বানভাসি হয়েছে কিছু এলাকা। মালবাজারের চাপাডাঙা, চেংমারি এলাকায় এ দিন জলবন্দি থাকতে হয়েছে বাসিন্দাদের। এ দিন নতুন করে জল ঢুকেছে ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ওদলাবাড়িতে। বৃষ্টিতে জল উপচে শুরু হয়েছে ঝোরা ভাঙনও। মালবাজার শহর লাগোয়া রাজা এবং নিউ গ্লাংকো চা বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শঙ্খিণী ঝোরায় ভাঙন শুরু হওয়ায় মালবাজার পুরএলাকার পাকা রাস্তা ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
শুধু মাল মহকুমা নয় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ময়নাগুড়িতেও। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানিয়েছেন, সব নদীর ওপরে নজর রাখা হয়েছে। কোথাও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রথমেই যাতে উদ্ধার কাজ শুরু করে ত্রাণের ব্যবস্থা করা যায় তার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাত্রারপাড় এলাকাতেও ফের জলস্তর অনেকটাই বেড়ে যাওয়া দুর্ভোগের মুখে হাজার খানেক বাসিন্দা। তিস্তা, চেল, লিস, ঘিস, নেওড়া, কুর্তির মত নদীগুলো টানা বৃষ্টিতে ফুঁসতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র তিস্তা পাড়ে থাকা চাপাডাঙা, চেংমারির এলাকাতেই দু’হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। উঁচু বাঁধ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ত্রাণ শিবিরে শুকনো খাবার মিললেও পানীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ। বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দা রতন রায়, অমল মণ্ডলেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে পলিথিন এবং শুকনো খাবার পেয়েছি। পানীয় জল মিলছে না।’’ মালবাজারের বিডিও ভূষণ শেরপা জানিয়েছেন, শিবিরে আশ্রিতরা কী পাচ্ছেন, তাঁদের কী চাহিদা রয়েছে তার ওপরে নজর রাখা হয়েছে।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী গত শনিবারও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করতে হবে। সে বিষয়ে প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।’’
বাড়ছে ভাঙনও। বছর দুয়েক আগে ময়নাগুড়ির পদমতি এলাকায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীতে বাঁধ তৈরি হয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই বাঁধের বড় অংশ জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রুহি দাসের দাবি, ‘‘বাঁধ ভেঙে ইতিমধ্যেই এলাকার কয়েকশো বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে৷ নদীতে তলিয়েছে শতাধিক বাড়ি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদমতি ও দোমহনি এলাকায় প্রায় চারশো পরিবার এখনও বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন ৷ প্রশাসনের তরফ তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার কাজ চলছে৷
কোচবিহারের কিছু এলাকায় অবশ্য বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। যদিও তোর্সা পারের কেশব আশ্রম এবং ঘুঘুমারি এলাকায় জল খানিকটা বেড়েছে। মেখলিগঞ্জেও তিস্তার জল বেড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মেখলিগঞ্জের তিস্তায় জল বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপয়েস্তি ও নিজতরফ গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এ দিন অনেকেই সেই সব শিবির ছাড়তে শুরু করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তোর্সা বাঁধের কিছু এলাকায় মাটি সরে গিয়েছে। সেখানে সংস্কারের কাজ করছে সেচ দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy