Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কারও হাতে পাথর, বাঁশও

চাকরি জীবনে বহু যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখেছি। সীমান্তে গোলাগুলিও দেখেছি। কিন্তু স্টেশনে এমন অরাজক পরিস্থিতি হতে পারে তা কল্পনাতেও আসেনি কোনও দিন।

ব্রিজেন ত্রিপাঠী
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

চাকরি জীবনে বহু যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখেছি। সীমান্তে গোলাগুলিও দেখেছি। কিন্তু স্টেশনে এমন অরাজক পরিস্থিতি হতে পারে তা কল্পনাতেও আসেনি কোনও দিন।

পাক্কা আধঘণ্টা দেরিতে রবিবার সকালে ট্রেন এনজেপি পৌঁছল। ভোর পাঁচটায় স্টেশনে এসে অপেক্ষা করছি। ৬টা ২০ মিনিটে অওধ অসম এক্সপ্রেস এনজেপি পৌঁছনোর কথা, কিন্তু পৌঁছল সাতটার পরে। ট্রেনে বসে রয়েছি কিন্তু ছাড়ার নাম নেই। এক ঘণ্টা-দু’ঘণ্টা পার হয়ে গেল। শুনলাম গ্রুপ ডি-র কর্মীদের নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে শনিবার। পরীক্ষার্থীরা ফিরতে পারেননি বলে রেল অবরোধ হচ্ছে। ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই প্রশসান কোনও পদক্ষেপ করবে, অবরোধ উঠবে। কিন্তু হঠাৎই শুনতে পেলাম তুমুল গোলমাল হচ্ছে। কামরা থেকে নেমে দেখলাম এক সাংঘাতিক দৃশ্য।

লাইনে কিছু জ্বালানো হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে আকাশ। এক দল ছাত্র কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সিগন্যাল পোস্টে চড়ে রয়েছে, ইঞ্জিনে উঠে একদল যথেচ্ছ ভাঙচুর চালাচ্ছে। আমার সামনেই কয়েক জন আমাদের এসি প্রথম শ্রেণির কামরায় পাথর ছুড়ে ভেঙে দিল। কেউ বাধা দেওয়ার নেই। চারদিকে পরীক্ষার্থীর দল। কারও হাতে পাথর, কারও হাতে বাঁশ। সত্যি কথা বলতে, কয়েক মুহূর্ত যেন নিজেকেও খুবই আতঙ্কিত মনে হয়েছিল। এবার দেখলাম একদল পুলিশ ছাত্রদের লাঠিপেটা করছে। এক দিকে ভাঙচুর, অন্য দিকে লাঠিপেটা। আইনের শাসন কী একেই বলে!

কিছুক্ষণ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল। তার আগেই কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের অনেকে ভয়ের চোটে নেমে গিয়েছেন স্টেশনে। অনেকের সঙ্গেই বাচ্চা ছিল। তারা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে।

এ সব পেরিয়ে যখন সব ঠান্ডা, তার পরেও ট্রেন ছাড়তে লেগে গেল কিছুক্ষণ। আমার মেয়েও সেনাবাহিনীতে কাজ করে। কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে আজ লখনউ রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন ছাড়তেই সাড়ে চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। রাস্তায় আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই পরিবার নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম। অন্য কোনও ভাবে যাব। ট্রেন যাত্রা কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও আজ থেকে মনে গেঁথে গেল।

(অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাত্রী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

experience Passenger Share
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE