ভরসা: মা চপলাদেবীর সঙ্গে অনুপ্রিয়া।— নিজস্ব চিত্র।
আর্থিক অনটনের জন্য ইচ্ছে থাকলেও পড়াতে পারেননি বড়ো মেয়েকে। মাঝ পথেই পড়া বন্ধ করে তার বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছোট মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য স্বামীর সঙ্গে মাঠে গিয়ে দিনমজুরি শুরু করেন ইংরেজবাজারের প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ চপলা মণ্ডল। মায়ের সেই কঠিন জীবনপণ পরিশ্রমের মুখ রাখলেন মেয়ে অনুপ্রিয়া। উচ্চমাধ্যমিকে ৪৬৫ নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তবে অনুপ্রিয়ার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত চপলাদেবী ও তাঁর স্বামী স্বপনবাবু। যদিও মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য মাঠে আরও হাড় ভাঙা খাটনিতেও রাজি বলে জানিয়েছেন মণ্ডল দম্পতি। মেধাবী ছাত্রীটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও।
ইংরেজবাজার ব্লকের অমৃতি পঞ্চায়েতে প্রত্যন্ত গ্রাম মহানন্দা নদীর ধারের গোকুলনগর কামাত। ভাঙাচোরা একটি বাড়িতে থাকেন অনুপ্রিয়ারা। স্বপনবাবু ও চপলাদেবীর তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। বড়ো ছেলে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। অনুপ্রিয়া নঘরিয়া হাই স্কুলের ছাত্রী। এ বারে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে তিনি বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯০, ভূগোলে ৯৬, দর্শনে ৯০ ও সংস্কৃতয় ৯৪ নম্বর পেয়েছেন।
দিদির মতো তাঁরও বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু অনুপ্রিয়ার স্বপ্ন ভূগোল নিয়ে পড়ে অধ্যাপক হওয়ার। মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে এগিয়ে আসেন মা। তিনি স্বামীর সঙ্গে মাঠে যেতে শুরু করে দেন। অনেক সময় মাকে জমিতে গিয়ে সাহায্য করেন অনুপ্রিয়াও। এর পরেও উচ্চ মাধ্যমিকে এ হেন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবার।
অনুপ্রিয়া বলেন, ‘‘আমার সাফল্যের পেছনে মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। আগামী দিনে আমার আরও পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।’’ চপলাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে আরও পরিশ্রম করতে রাজি আছি। তবে সামান্য দিনমজুরির শ’দেড়েক টাকা দিয়ে পড়ার খরচ জোগাতে পারব কিনা বুঝতে পারছি না।’’ স্কুলের সুনাম করা মেধাবী ছাত্রীর পাশে বরাবরের মতো এ বারও থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুনীলকুমার সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy