বাবা অন্ধ, কাজ করতে পারেন না। অভাবী সংসারের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিতে মাঝপথে লেখাপড়ায় ইতি টেনে কাজের জন্য মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন মানিকচকের পাঠানপাড়ার রিজু খান (২০)। একইভাবে সংসারের হাল ধরতে বন্ধু রিজুর সঙ্গেই মুম্বই পাড়ি দিয়েছিল পাশের গ্রাম পিয়াসটোলার ২১ বছরের সাহেব ইসলামও। কিন্তু সংসারের জন্য রসদ যোগানো আর হল না। বাড়ি ফিরল তাঁদের কফিন বন্দি দেহ।
অভিযোগ, পুণেতে বহুতল তৈরির কাজ করার সময় রবিবার ৩২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে তাঁদের দুজনের মৃত্যু হয়। মুম্বই থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে কফিনবন্দি দেহ দু’টি গ্রামে ফিরতেই শোকাহত দুই গ্রাম। দুই পরিবারের অভিযোগ, ওই দুজনকে খুন করেছে ঠিকাদার সংস্থার লোকজন। তবে এখনও থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি।
মানিকচকের নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঠানপাড়ার বাসিন্দা রিজু নূরপুর হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। সংসারের হাল ধরতে বছরখানেক আগে স্থানীয় ঠিকাদার শেখ কুরবান ও শেখ মন্টুর হাত ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে মুম্বই গিয়েছিল রিজু। রিজুর সহপাঠী ছিল পাশের পিয়াসটোলা গ্রামের সাহেব ইসলাম। তাঁদেরও অভাবের সংসার।
দুই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুণেতে বহুতল বাড়ি তৈরির শ্রমিকের কাজ করে দু’জন মাসে ১২ হাজার টাকা করে বেতন পেত। কিন্তু গত নভেম্বর মাস থেকে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা কাজ ছেড়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্রেনের টিকিটও কাটা হয়েছিল। দুই পরিবারের আরও অভিযোগ, রবিবার পুণেতে কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বকেয়া বেতন মেটানোর নাম করে ঠিকাদাররা ওই দুজনকে রবিবার সকালে কাজে নিয়ে যায়। আর সে দিন রাতেই ফোন করে জানায় যে কাজ করার সময় ৩২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রিজুর বাবা আগবান শেখের অভিযোগ, ‘‘বেতনের বকেয়া টাকা না দিতেই ঠিকাদাররা ৩২ তলা থেকে ফেলে দিয়ে ছেলেকে খুন করেছে।’’ সাহেবের বাবা রমজান ইসলামও ছেলেকে খুনের অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। যদিও দুই ঠিকাদারই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, কাজ করতে দিয়ে পড়ে গিয়েই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মানিকচক থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই বিষয়ে থানায় অভিযোগ হয়নি। এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy