Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার আসেননি, মৃত যুবক

সরকারি হাসপাতালে ফের একবার চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর এই অভিযোগ উঠল৷ যার জেরে সোমবার দুপুরে উত্তেজনা ছড়ায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে৷ চিকিৎসক ও নার্সদের ঘিরে বিক্ষোভে দেখান মৃতের পরিজনরা৷

আশ্বাস: রোগীর আত্মীয়দের বোঝাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

আশ্বাস: রোগীর আত্মীয়দের বোঝাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম প্রতিবন্ধী যুবক হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন৷ অথচ, দেখা নেই কোনও চিকিৎসকের।

সরকারি হাসপাতালে ফের একবার চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর এই অভিযোগ উঠল৷ যার জেরে সোমবার দুপুরে উত্তেজনা ছড়ায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে৷ চিকিৎসক ও নার্সদের ঘিরে বিক্ষোভে দেখান মৃতের পরিজনরা৷ পরিস্থিতি সামলাতে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ছুটে যায়৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি শান্ত হয়৷

দিন কয়েক আগে মোহিতনগরের হলদিবাড়ি মোড়ের কাছে নয়াবস্তি এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাথায় বলের আঘাত পেয়েছিল অর্জুন অধিকারী নামের এগারো বছরের এক বালক৷ অভিযোগ উঠেছিল, রাতভর যন্ত্রণায় কাতরালেও কোনও চিকিৎসকই অর্জুনকে দেখেননি৷ যার জেরে পর দিন সকালে তার মৃত্যু হয়৷ সোমবারের ঘটনার সূত্রপাতও মোহিতনগর থেকেই৷ মোহিতনগরের গোল ঘুমটি এলাকায় বাড়ি প্রতিবন্ধী যুবক যুগল পালের (১৯)৷

এ দিন সকালে বাড়ির কাছে জল আনতে যায় যুগল৷ সেই সময় শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারগামী এক বেসরকারি বাস তাকে ধাক্কা দেয়৷ গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তার বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসকের পরামর্শে তার সিটি স্ক্যান হয়৷ এরপর তাকে বেডে পাঠিয়ে দিয়ে শুধু একটি স্যালাইন দেওয়া হয়৷ কোনও ওষুধ দেওয়া হয়নি৷ কোনও চিকিৎসকও তাকে দেখতে আসেনি৷

যুগলের ভাই সুজন সাহার অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসককে ডাকার জন্য আমরা বারবার কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে ছুটে যাই৷ কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন৷ সাফ জানিয়ে দেন, দুপুর দুটোর আগে চিকিৎসক আসবেন না৷’’ যুগলের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, এ ভাবেই পড়ে থাকতে থাকতে দুপুর সওয়া একটা নাগাদ তার মৃত্যু হয়৷

যুগলের মৃত্যু হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তার আত্মীয়-পরিজনরা৷ খবর পেয়ে মোহিতনগর এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষ ছুটে আসে৷ চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের ভিতরে চিকিৎসক ও নার্সদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ৷ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের মধ্যেও৷

খবর পেয়ে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়৷ কিন্তু বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশকেও প্রথম দিকে খানিকটা বেগ পেতে হয়৷ তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশকর্তারাই বুঝিয়ে শান্ত করেন৷ যুগলের বাড়ির লোকেরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, সিএমওএইচ সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করেন৷ যুগলের আত্মীয় অঞ্জলি পাল বলেন, ‘‘চিকিৎসক এলে ছেলেটাকে বাঁচানো যেত৷’’

যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ সুপার গয়ারাম নস্কর কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ঘটনার পরই সুপারকে তাঁর দফতরে ডেকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চান সিএমওএইচ জগন্নাথ সরকার৷ পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি৷ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে৷’’ যে বাসটি যুগলকে ধাক্কা দেয় তার চালক ও খালাসিকে আটক করেছে পুলিশ৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE