Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লেটলেট ইউনিটের দাবি

চলতি বছর জুলাইয়ে বালুরঘাটে তেমন ভারি বৃষ্টি হয়নি। মাঠঘাটে বৃষ্টির জমা জল প্রায় নেই বলে ডেঙ্গি রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভার উৎস কমেছে। ফলে এখনও অবধি জেলায় ডেঙ্গি থাবা বসাতে পারেনি ঠিকই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৯:৫০
Share: Save:

গত বছর থেকে এখনও শিক্ষা নেয়নি দক্ষিণ দিনাজপুর। ফি বছর জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক আকার নিলেও চলতি মাসে বালুরঘাটে বাসিন্দাদের বাড়িতে লিফলেট বিলির মধ্যে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার থেমে রয়েছে। পুরসভার তরফে নেই মশা নিধনে তেল ছড়ানোর উদ্যোগও। গ্রামের দিকে পঞ্চায়েত স্তরেও এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। অথচ গত বছর জেলায় ডেঙ্গিতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরীক্ষার আগে আরও ৫ জন মারা যান। অভিযোগ, তাঁদের অজানা জ্বরে মৃত্যু হয়েছে বলে লেখা হয়েছিল। গত বছর প্রায় ৮ হাজার মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা মেলে ১,৬১৫ জন। এ দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, এ বছর এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্তের কোনও খবর নেই। তবে ডেঙ্গি মোকাবিলায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর তৈরি।

চলতি বছর জুলাইয়ে বালুরঘাটে তেমন ভারি বৃষ্টি হয়নি। মাঠঘাটে বৃষ্টির জমা জল প্রায় নেই বলে ডেঙ্গি রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভার উৎস কমেছে। ফলে এখনও অবধি জেলায় ডেঙ্গি থাবা বসাতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু রোগ সময় চলে যায়নি। গত বার জুলাইয়ের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুরে ডেঙ্গি জাঁকিয়ে বসে। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে বালুরঘাট, তপন, কুমারগঞ্জ ও গঙ্গারামপুরে ডেঙ্গি এবং অজানা রোগে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির প্লেটলেট চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। কেননা, ডেঙ্গিতে আক্রান্তের প্লেটলেট (রক্তের অনুচক্রিকা) ৬০ হাজারের নীচে নেমে গেলেই তাকে বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার দূরের শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ফলে বালুরঘাট থেকে মালদহ মেডিক্যালে পৌঁছনোর আগেই রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়ে গত বছর রাস্তাতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর অক্টোবরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বালুরঘাটের পতিরামের ডাকবাংলো পাড়ার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু (১৩) এবং পতিরামের পাইকপাড়া এলাকার গৃহবধূ পলি সরকারকে (২৩) সময় মতো প্লেটলেট দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে না পারাই এ ক্ষেত্রে ওই দু’জনের মৃত্যুর কারণ বলে চিকিৎসকদের একাংশও মনে করেন।

তা হলে কেন রাজ্যের এক কোণে পড়ে থাকা সীমান্তবর্তী এই জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির প্রয়োজনীয় ও জরুরি ভিত্তিতে প্লেটলেট চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে না? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, প্লেটলেট ইউনিট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো ছাড়া জেলা হাসপাতালগুলিতে নেই। তবে ম্যাকঅ্যালাইজা পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গি শনাক্ত করে চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা বালুরঘাট হাসপাতালে রয়েছে। সে কারণে রোগীর বাড়াবাড়ি এবং দেরিতে চিকিৎসার কারণ ছাড়া ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম বলে সুকুমারবাবুর দাবি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর অক্টোবরে অজানা জ্বরে আক্রান্ত বালুরঘাট ও হিলি এলাকার পাঁচ জনের মৃত্যুর রিপোর্ট হাসপাতাল থেকে দেওয়া হলেও আদতে প্রত্যেকেই হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যান। তাদের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট না আসায় সঠিক রোগ নির্ণয়ের আগেই ওই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষ শহরের বাড়িতে লিফলেট বিলি করে উদ্যোগে ক্ষান্ত দিয়েছে বলে অভিযোগ। ভাঙা রাস্তায় জমা জল পরিস্কার কিংবা নর্দমাগুলিতে মশা মারার তেল ছড়ানোর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। সচেতনার প্রচারে নামতে দেখা যায়নি শাসক কিংবা বিরোধী কাউন্সিলারদের। পুরপ্রধান রাজেন শীলের বক্তব্য, ‘‘আমরা শহরে সাফাই অভিযান এবং মশা নিধনে জোর দিয়েছি। রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার প্রচারও হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE