Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিখর ছোঁয়ার উচ্ছ্বাস

টেলিভিশনের পর্দায় পর্ষদ সভাপতির মুখে নিজেদের নামগুলি শোনার পরেই ঘরে ঘরে জ্বলে উঠল আলো। উৎসবে ভাসল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কৃতীরা। তাদের ঘিরে কাছের মানুষরাও আনন্দে উদ্বেল ।

মুখমিষ্টি: মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরে খুশিতে উদ্বেল ছাত্রীরা। বালুরঘাট গার্লস স্কুলে শনিবার। ছবি: অমিত মোহান্ত

মুখমিষ্টি: মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরে খুশিতে উদ্বেল ছাত্রীরা। বালুরঘাট গার্লস স্কুলে শনিবার। ছবি: অমিত মোহান্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০৩:২৬
Share: Save:

প্রত্যেকেরই মেধা স্বীকৃত। বাড়িতে। স্কুলে। বন্ধুমহলে। তাই ফলপ্রকাশের আগে উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছিল ওরা। নিজেদের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার উদ্বেগ। পাশাপাশি প্রত্যাশার ভার রক্ষার। টেলিভিশনের পর্দায় পর্ষদ সভাপতির মুখে নিজেদের নামগুলি শোনার পরেই ঘরে ঘরে জ্বলে উঠল আলো। উৎসবে ভাসল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কৃতীরা। তাদের ঘিরে কাছের মানুষরাও আনন্দে উদ্বেল ।

উত্তর দিনাজপুর

গোটা রাজ্যের মধ্যে অষ্টম স্থান দখল করে ঘোর কাটছে না রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের ছাত্র শোভন দেবের। শোভনের থেকে দুই নম্বর বেশি পেয়ে ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে করোনেশন স্কুলেরই ছাত্র তার সহপাঠী স্নেহাশিসকুমার গুপ্ত। শোভনের মা কণিকাদেবী বলেন, ‘‘টিভিতে যখন ষষ্ঠ স্থানাধিকারী হিসেবে স্নেহাশিসের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন আমার মনে হয়েছিল শোভনও হয়তো মেধাতালিকায় জায়গা করে নেবে। কারণ, ওরা দুজন খুব ভাল বন্ধু। স্কুলেও ওরা দুজনেই প্রায় একইরকম ফল করত।’’ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় শোভন। স্নেহাশিস চায় ই়ঞ্জিনিয়ার হতে। করোনেশনের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একাগ্রতার জোরেই স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করল ওরা।’’

দক্ষিণ দিনাজপুর

রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা করে নিল দক্ষিণ দিনাজপুরের তিন ছাত্রী সৃজা অধিকারী,অনন্যা মণ্ডল ও ঐশিতা সরকার। পঞ্চম স্থান দখলকারী গঙ্গারামপুর হোলিক্রস গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সৃজার বাবা পীযূষবাবু ও মা শিপ্রাদেবী দুজনেই স্কুলের শিক্ষক। আট জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত সে। পতিরাম বিবেকানন্দ গার্লসের ছাত্রী অনন্যার বাবাও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মা ঝর্ণাদেবী ওই স্কুলের শিক্ষিকা। মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় নবম স্থান দখল করেছে সে। ৬৮১ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী ঐশিতা সরকার। তার বাবাও স্থানীয় নাজিরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। সাতজন গৃহশিক্ষকের পাশাপাশি বাবাও নিয়মিত তাকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছে ঐশিতা। ছাত্রদের মধ্যে বালুরঘাট ললিতমোহন আদর্শ হাইস্কুলের ছাত্র বাসুদেব বসাক ৬৮৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেছে। বাসুদেবের বাবাও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

মালদহ

সকাল ন’টা থেকেই চোখ ছিল টিভির পর্দায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মেধা তালিকা ঘোষণা শুরু করতেই লোডশেডিং। তবে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই চলে আসে বিদ্যুৎ। তখনই ভেসে আসে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকান্দ বিদ্যা মন্দিরের স্বপ্নিল মিশ্র। সেই খবরে উৎসবের আলো জ্বলে ওঠে স্বপ্নিলের বাড়ি মালদহের সীমান্তবর্তী আইহোর বাবুপাড়া গ্রামে। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে স্বপ্নিল। বাবা বিজয় মিশ্র পেশায় ব্যবসায়ী। মা প্রতিমাদেবী আইহো উচ্চ বিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষিকা। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্নিলের আগ্রহ ক্রিকেট খেলায়। সময় পেলেই গ্রামের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে নেমে পড়ে ব্যাট হাতে। রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যা মন্দিরের মহারাজ স্বামী সুরাত্মানন্দ বলেন, ‘‘স্বপ্নিলের ফলাফল স্কুলের সুনাম ধরে রাখল।’’

জলপাইগুড়ি

গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনই একটি কাগজে ৬৮০ লিখে নিজের ঘরের দেওয়ালে তা টাঙিয়ে রেখেছিল আশালতা বসু বিদ্যালয়ের ছাত্রী অন্বেষা দাস৷ এ বার টেস্ট পরীক্ষায় ৬৬০ পেতেই সেই কাগজ কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলে অন্বেষা৷ কিন্তু শনিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কলকাতায় বসে যখন মেধাতালিকা প্রকাশ করলেন, তখন দেখা গেল গত বছর যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল অন্বেষা, তার চেয়েও তিন নম্বর বেশি পেয়ে তার নম্বর দাঁড়িয়েছে ৬৮৩৷ বাবা অভিজিৎ দাস ও মা কাকলী দাস জানায়, একটানা কখনই পড়াশোনা করেনি অন্বেষা৷ সুযোগ পেলেই হিন্দী সিরিয়াল দেখে নিত সে৷ আর বেড়াতে ভালবাসে অন্বেষা। এ বার যাচ্ছে রাজস্থান।

আনন্দের আবহ ধূপগুড়ি হাইস্কুলে। ৬৮২ নম্বর পেয়ে রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করে এই স্কুলের ছাত্র অয়ন মজুমদার। অয়নের বাবা মা দুজনেই স্কুলের শিক্ষক। অয়ন জানায়, সকলের সঙ্গে পরামর্শ করেই ভবিষ্যতে কী পড়বে করবে তা ঠিক করবে সে।

কোচবিহার

টেলিভিশন দেখবে বলে বাবা কেবল টিভির লাইন কেটে দিয়েছিল এক বছর আগে। দিনহাটা গার্লস স্কুলের সেই ছাত্রী ঈশিকা সাহা ষষ্ঠ স্থান দখল করে সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা জেলায়।

শুধু ঈশিকা নয়, রাজ্যের মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে কোচবিহারের আরও দুই ছাত্রছাত্রী। একজন জেনকিন্স হাইস্কুলের অনাতপ মিত্র, অপরজন নিউটাউন গার্লস স্কুলের শতাব্দী গুহনিয়োগী। সকাল থেকেই ওই তিনজনের বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। ঈশিকার বাবা সজলবাবু দিনহাটার বড় শৌলমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা বীথিকাদেবী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ঈশিকা পড়াশোনায় বরাবর ভাল। তবে তাঁর একটু টিভি দেখার শখ। বছর দুয়েক আগে মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবেই সজলবাবু টেলিভিশনের লাইন কেটে দেন। পড়াশোনা করে মা-বাবার মতো শিক্ষিকাই হতে চায় ঈশিকা। নিউটাউন গার্লসের ছাত্রী শতাব্দী অবশ্য চিকিৎসক হতে চায়। তাঁর বাবা শৈবালবাবু ও মা শুক্লাদেবী দুজনেই হাইস্কুলে পড়ান।

শতাব্দীর বাড়ি থেকে একশো মিটার দুরেই জেনকিন্সের ছাত্র অনাতপের বাড়ি। তাঁর বাবা প্রসেনজিৎবাবু কোচবিহার পুরসভার কর্মী। মা হাইস্কুলের শিক্ষিকা। অনাতপের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।

আলিপুরদুয়ার

প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পড়াশোনা করত আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী চন্দ্রাণী কর্মকার। আর পাশাপাশি ছিল রবীন্দ্রনাথের গান। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান দখল করেছে চন্দ্রাণী। তার বাবা গৌতম কর্মকারের সোনার গয়নার দোকান রয়েছে। মেধাবী এই ছাত্রী জানায়, তার এই সাফল্যের পিছনে মা চন্দনা কর্মকারের অবদান সবথেকে বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ গান আর ছবি আঁকতে ভালবাসে চন্দ্রাণী। অবসর কাটে গোয়েন্দা গল্প পড়ে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় কামাখ্যাগুড়ি হাটকলোনির বাসিন্দা এই কিশোরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE