Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গির ভয়ে কাবু হাতুড়েরা, হাসপাতালের পথ দেখালেন রোগীদের

বসে আছেন চিকিৎসক অজোর মামুদ মিয়াঁ। কেউ তাঁকে হাতুড়ে বলে। কেউ গ্রামীণ চিকিৎসক। যে যে নামেই ডাকুক, গ্রামের মানুষের কাছে ভরসা এখনও মামুদরাই।

ভিড়: মালদহ মেডিক্যালে রোগীদের শয্যায় পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ভিড়: মালদহ মেডিক্যালে রোগীদের শয্যায় পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ 
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

দশ ফুট বাই দশ ফুটের ছোট্ট দোকান। তার কিছুটা টিন কিছুটা কম দামের কাঠের পাটাতন দিয়ে ঘেরা। তার মধ্যেই থরে থরে ওষুধের বাক্স সাজানো। পর্দার আড়ালে শয্যা পাতা। বসে আছেন চিকিৎসক অজোর মামুদ মিয়াঁ। কেউ তাঁকে হাতুড়ে বলে। কেউ গ্রামীণ চিকিৎসক। যে যে নামেই ডাকুক, গ্রামের মানুষের কাছে ভরসা এখনও মামুদরাই।

সে পেটের রোগ থেকে জ্বরের ওষুধ তো বটেই, স্যালাইন দিয়েও চিকিৎসা করেন। সেই মামুদদেরও এখন গ্রাস করেছে ডেঙ্গির ভয়। জ্বরের রোগী দেখলেই পরামর্শ দিচ্ছেন, “হাসপাতালে চলে যান। সেটাই ভালো হবে।” শুধু মামুদ নয়, কোচবিহারের পুলের পাড়ের আমজাদ হোসেন, টাপুরহাটের সুভাষ সরকার, পুরনো টাপুরহাটের আজাহার আলি, আমজাদ হোসেনদেরও বক্তব্যও একই।

অজোর মামুদ বলেন, “এখন জ্বরের রোগীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদিন কমপক্ষে দশ থেকে কুড়ি জন হাজির হচ্ছেন জ্বর নিয়ে। যাদের মধ্যে একটু অন্যরকম লক্ষ্মণ দেখি সোজা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। বাকিদের দু’একদিন সময় নিয়ে দেখি।” স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করতে করতেই দু’বছরের গ্রামীণ চিকিৎসার কোর্স করে চিকিৎসা শুরু করেন অজোর। পসারিহাট বাজারে কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা করছেন। কিন্তু জ্বর নিয়ে এ বারেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্নাতক হয়ে চিকিৎসা নিয়ে দু’বছরের পড়াশোনা করেন পুরনো টাপুরহাটের আজহার আলি। তিনি জানান, তাঁর বাবা, দাদারাও গ্রামীণ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন,“জ্বরের প্রকোপ এ বারে খুব বেশি। তবে ডেঙ্গি এখনও পাইনি। তাই একটু ঝুঁকি নিয়ে এক দু’দিন দেখি। অন্যরকম উপসর্গ দেখলেই শহরে যাওয়ার অনুরোধ করি।”

কোচবিহারেও এ বারে ৬৪ জনের শরীরে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। সে সব দিকে নজর রয়েছে ওই চিকিৎসকদেরও। বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, তাঁদের অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বাইরে চিকিৎসক দেখানো তাঁদের কাছে খুব কঠিন। হাসপাতালে যাতায়াতেও টাকা চাই। তাই গ্রামের চিকিৎসকরাই তাঁদের ‘ভরসা’। পসারিহাটের বাসিন্দা রতন বর্মন জানান, তাঁর স্ত্রীর জ্বর হয়েছিল। হাতুড়ের উপরেই নির্ভর করেছেন। তাতেই জ্বর সেরেছে।

আরেক বাসিন্দা মজিবর মিয়াঁ বলেন, “জ্বরের সঙ্গে খুব মাথাব্যাথা ছিল। অস্থির লাগছিল। গ্রামের চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে যাই। সুস্থ হয়ে ফিরেছি।” গ্রামীণ চিকিৎসক সুভাষ সরকার বলেন, “আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তাই করি। অযথা ঝুঁকি নেই না। এ বারের জ্বরে তো নয়ই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Doctors Patients Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE