পর্যটন ব্যবসায় গত একমাস ধরে থাবা বসিয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। এবারে উত্তরের ভোটপর্ব মিটতেই (কোচবিহার ছাড়া) গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতে চাইছে পাহাড়, ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের কথায়, শুধু ভোটের কারণে গত মার্চের মাঝপথ থেকেই পর্যটকদের দেখা মেলেনি। এবারে ভোট মিটে গিয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতাতেও ভোটপর্ব মিটে যাবে। তারপরই পর্যটকদের ঢল নামবে। ভোট শেষ হতেই তাই এখন বুক বেঁধেছেন পাহাড়, ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এই আশায় অনুঘটকের কাজ করেছে দক্ষিণবঙ্গের প্রবল দাবদাহ। তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে পাহাড় এবং ডুয়ার্স যে আদর্শ, তা জেনেই অনেকে পর্যটক চলে আসতে পারেন বলেও আশা করছেন পর্যটক ব্যবসায়ীরা।
এর বাইরে মে মাস থেকেই কলকাতা সহ রাজ্যের বেশির ভাগ স্কুলগুলোতেই গরমের ছুটিও পড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ব্যবসার লোকসান অনেকটাই মেটার আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। লাভা, ঝান্ডি, লোঁলেগাঁও, রিশপ, মূর্তি, লাটাগুড়ির মতো কেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যেই বুকিং চেয়ে ফোনও করতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। আর এতেই বাড়তি উদ্দীপনাও তৈরি হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এতোয়ার পক্ষে সম্রাট সান্যাল বললেন, ‘‘মে মাসে একটা ভাল রকমের ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েইছে। ভোটপর্ব মিটে যাওয়া এবং অবশ্যই দক্ষিণবঙ্গের দাবদাহ পর্যটনকে সাহায্য করবে।’’ কালিম্পঙের একাধিক পাহাড়ি গ্রামে হোম স্টে এবং ট্রেকিং ব্যবস্থপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ী অরিন্দম দত্ত। তিনি জানালেন ভোট মিটতেই পর্যটকদের ফোন আসা বেড়ে গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে দক্ষিণে যা গরম পড়ছে, তাতে সস্তায় বেড়ানোর জায়গা হিসাবে ডুয়ার্সে এবং কালিম্পঙের পাহাড়ি গ্রামগুলোর কথাই ওদের মনে পড়ছে। আগে ঘুরে গিয়েছেন এমন পর্যটকরাই বেশি ফোন করছেন। ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব দিব্যেন্দু দেবও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের কারণে গত একমাসে ব্যবসা একেবারে মন্দায় চলেছে। এবারে ভোট মিটেছে বলে পর্যটকদের দেখা মিলবে বলেই মনে করছি।’’ কিন্তু অল্প সময়ে যারা আচমকা ডুয়ার্সে বেড়াতে আসবেন বলে স্থির করছেন তাদের জন্যে ট্রেনের টিকিট একটা সমস্যার কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন দিব্যেবাবু। মূর্তি এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মে মাসে তিলধারনের জায়গা থাকবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সে জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই গরুমারা জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশ তিন মাসের জন্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তার আগে ভোটের মন্দা মেটাবার জন্যে মাঝের শুধু মে মাসটা হাতে রয়েছে। সে কারণেই পর্যটকদের বড় ঢল যাতে এই মে মাসে চলে আসে তা পর্যটনব্যবসায়ী সকলেই চাইছেন। গাড়ি চালকদের মধ্যেও গত এক মাসে হতাশাই বেড়ে গিয়েছিল। মালবাজারের পর্যটকদের জন্যে গাড়ি ভাড়া দেন ছোট গাড়ির মালিক দেবাশিস রায়। দেবাশিস যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘গত একমাসের মত মন্দা সময় সাম্প্রতিক কালে আর আসে নি। এবারে কলকাতার বেশ কিছু পর্যটকদের ফোন পেয়েছি। আশা করছি মে মাসে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।’’ ভোটের পাশাপাশি মার্চ মাস অবধি ইংরাজি মাধ্যম অনেক বোর্ডেরই পরীক্ষা চলেছে, সেটিও পর্যটক কম আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মালবাজারের ছোট গাড়ির আরেক ব্যবসায়ী নিরুপম সাহা। নিরুপম বললেন, ‘‘এখন ভোট আর পরীক্ষা দুটোই মিটেছে। তাই পর্যটকেরা ডুয়ার্সমুখো হবেনই।’’ একপ্রকার ডুয়ার্সের পর্যটনের মন্দা কেটে গিয়ে সুদিন ফিরছেই এমনটাই আশা সব মহলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy