বুধবার ভোর ৪টে থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সেই হাতিকে কব্জা করতে হিমশিম খেল বন দফতর।
চিতাবাঘের পরে এ বার বুনো হাতি ঢুকে পড়ায় ৮ ঘণ্টা তোলপাড় শিলিগুড়ি শহর।
বুধবার ভোর ৪টে থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সেই হাতিকে কব্জা করতে হিমশিম খেল বন দফতর। কারণ, শয়ে-শয়ে কৌতূহলী ও অত্যুৎসাহী তাকে চার দিক থেকে প্রায় তাড়িয়ে বেড়ানোয় সে উদভ্রান্ত হয়ে পড়ে। গোড়ায় শহর লাগোয়া ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং পরে ঢিল-ইটের টুকরো পিঠে পড়ায় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা সেবক রোডে ঢুকে পড়ে সে। তাড়ায় ছুটতে গিয়ে একটি সিনেমা হলের পাশে বাইকের গুদামে ঢুকে পড়ে হাতিটি। প্রায় ৫০ টি বাড়ি, একাধিক গাড়ি ও বাইক ভেঙে দেয় দলছুট হাতিটি। বনকর্মীরা হাতির কাছে বহু ক্ষণ ঘেঁষতেই পারেননি জনতার ভিড়ের চাপে। হাতিকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে তার ছবি তোলার হিড়িক দেখা দিলে কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। কোনওক্রমে এক বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে সক্ষম হন বনকর্মীরা। তাতে কোনও কাজ হয়নি। সেখানেই আরও তিন বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। এর পরে প্রায় আধ ঘণ্টা দৌড়ঝাঁপ করার পর নিস্তেজ হয়ে পড়ে সে। পরে বশে এনে ট্রাকে তুলতে আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে যায়। দু’টি ক্রেন নিয়ে গিয়ে হাতিটির পায়ে শিকল পরিয়ে, তাকে বেল্ট বেঁধে ট্রাকে তুলতে আরও প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে।
গ্যালারি দেখুন
• ৮ ঘণ্টা ধরে শিলিগুড়ি দাপালো দলছুট দামাল
বন দফতর সূত্রের খবর, কাকভোরে প্রথমে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে ভাঙচুর, দৌড়ঝাঁপ করার পর জঙ্গলে প্রায় ঢুকেই যাচ্ছিল সে। এরই মাঝে সেখানে ঢোকার মুখে ফের নতুন করে জনতার তাড়া খেয়ে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে দৌড়নো শুরু করে। একতিয়াশাল, চয়নপাড়া, গৌরাঙ্গপল্লি, আশরফনগর হয়ে ইস্কন মন্দির রোড দিয়ে হাতিটি ঢুকে যায় সেবক রোডে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল এনএস মুরলি বলেন, ‘‘হাতিটির বাইরে কিছু ক্ষত তৈরি হলেও শারীরিক ভাবে সুস্থ রয়েছে। চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে। হাতিটিকে প্রথমে শুকনায় পরীক্ষা করা হবে। তার পর মহানন্দা অভয়ারণ্যে ছাড়া হবে।’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল থেকেই হাতিটি বের হয়েছিল। হাতিটির বাঁ চোখে পুরনো ক্ষত রয়েছে বলে বনকর্মীরা জানিয়েছেন। ওই এলাকায় প্রায় সাত-আটটি হাতির একটা দল কিছু দিন থেকেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে। এর আগেও সরস্বতীপুর চা বাগান এলাকায় এই দলটি কিছু দিন আগে তাণ্ডব চালায় বলে জানা গিয়েছে। এই হাতিটি সম্ভবত ওই দলেরই বলে জানা যাচ্ছে। কোনও ভাবে দলছুট হয়ে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলাতেই এই বিপত্তি।
অন্য দিকে, সেবক রোডে হাতি ঢোকার খবর পেয়ে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। ভক্তিনগর চেকপোস্ট থেকে পানিট্যাঙ্কি মোড় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘সমস্ত থানা থেকে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী নামানো হয়েছিল। হাতির আতঙ্ক তো ছিলই, বিপুল জনতার চাপে রাস্তা বন্ধ করে দিতে হয়। হাতিটি যে ভাবে মাঝে মধ্যেই দিক বদল করছিল তাতে বিপদের আশঙ্কা ছিল।’’
দেখুন ভিডিও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy