Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

হাসপাতালে হট্টমেলা

এক একজন রোগীকে দেখতে ন্যূনতম তিন থেকে পাঁচজন বা তারও বেশি আত্মীয় ওয়ার্ডে ঢুকছেন। একেই, একটি বেডে দু’জন করে রোগী ভর্তি রয়েছেন। কেউ আক্রান্ত ভাইরাল জ্বরে, কেউ ডেঙ্গিতে, কেউ ধুকছেন শ্বাসকষ্টে। পাশ ফেরার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

বৃহস্পতিবার বেলা একটা। ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়েছে এক ঘণ্টা আগেই। কিন্তু মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঢোকার বিরাম নেই রোগীদের পরিজনদের।

এক একজন রোগীকে দেখতে ন্যূনতম তিন থেকে পাঁচজন বা তারও বেশি আত্মীয় ওয়ার্ডে ঢুকছেন। একেই, একটি বেডে দু’জন করে রোগী ভর্তি রয়েছেন। কেউ আক্রান্ত ভাইরাল জ্বরে, কেউ ডেঙ্গিতে, কেউ ধুকছেন শ্বাসকষ্টে। পাশ ফেরার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। তারমধ্যেই ওই আত্মীয়রা এসে সেই বেডেই বসে পড়ছেন গাদাগাদি করে। আর যাঁরা বেডে বসতে পারছেন না, তাঁরা বসছেন মেঝেতে। ভিজিটিং আওয়ারের কোনও বালাইই নেই। পরোয়া নেই সংক্রমণেরও। এ ভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়ার্ডে কাটিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। আত্মীয়-পরিজনদের ভিড়ে এখন দিনভর কার্যত এমনই হট্টমেলা মালদহ মেডিক্যালে।

অন্য সরকারি হাসপাতালের মতোই মালদহ মেডিক্যালে সকাল ৮ থেকে ৯ টা, দুপুর ১১টা থেকে ১২টা ও বিকেল ৪টে থেকে ৬টা পর্যন্ত রোগীদের সঙ্গে আত্মীয়দের দেখা করার সময় নির্ধারিত। কিন্তু এই হাসপাতালে নিয়ম শুধু খাতা-কলমেই। অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীদের কার্যত তোয়াক্কা না করেই রোজ সকাল হতেই রোগীর আত্মীয়রা ঢুকছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।

অথচ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা মাইকে শোনা যাচ্ছে যে রোগীর বেডে কেউ বসবেন না, ওয়ার্ডে অযথা ভিড় করবেন না। হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ারের কথা লেখা রয়েছে। ওই ওয়ার্ড দু’টির গেটে থাকছেন নিরাপত্তারক্ষীরাও। সর্বোপরি, নজরদারিতে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। তবুও এই অব্যবস্থা চলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মেল মেডিক্যাল এক নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকতেই ডান দিকের শয্যায় জ্বর নিয়ে ভর্তি মঙ্গলবাড়ির যুবক অভিজিৎ দাস। পাশে আরও এক রোগী। তিনিও জ্বরে আক্রান্ত। বেলা একটায় গিয়ে দেখা গেল সেই শয্যায় দু’জন তো রয়েছেনই, অভিজিতের তিনজন আত্মীয়ও ওই শয্যায় বসে। রয়েছেন অপর রোগীর এক আত্মীয়ও। সেখানে জায়গা না মেলায় মেঝেতেই বসে অভিজিতের আরও দুই মহিলা আত্মীয় পুরাতন মালদহের পোপড়ার বাসিন্দা স্বপ্না ও লতিকা দাস।

ভিজিটিং আওয়ার তো একঘন্টা আগেই শেষ, এখনও কেন ওয়ার্ডে? ওই দুই মহিলা বললেন, ‘‘বাড়ির কাজকর্ম সেরে আসতে বেলা ১২টা বেজে গেল। বিকেল পর্যন্ত থাকব। শুধু আমরা কেন, সব রোগীরই তো লোকজন এখানে রয়েছে। কেউ তো কিছু বলছে না।’’ এই ওয়ার্ডেই জ্বর নিয়ে ভর্তি সামসির নজরুল হক। একই শয্যায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত আরও এক রোগী। সেই শয্যাতে বসেই নজরুলের স্ত্রী রেজিনা বিবি ও পাঁচ বছরের ছেলে আলতাফ বসে বিস্কুট খাচ্ছে। রেজিনা বিবি বলেন, ‘‘কী করব, স্বামীর শুশ্রুষা তো করতেই হবে। বাড়িতে আর কেউ নেই তাই ছেলেকে কোথায় রাখব, দিনভর এখানেই রয়েছি।’’এই চিত্র গোটা ওয়ার্ড জুড়েই। হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘এই অব্যবস্থা বন্ধ করার চেষ্টা কম হয়নি। সারাক্ষণই প্রচার চলছে। কিন্তু পরিজনেরা কেউ কথা শোনে না। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও কম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE