Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সহায়ক মূল্য না পেয়ে নাভিশ্বাস চাষিদের

ধানের দাম না পেয়ে রায়গঞ্জে জাতীয় সড়ক অবরোধ চাষিদের। — নিজস্ব চিত্র

ধানের দাম না পেয়ে রায়গঞ্জে জাতীয় সড়ক অবরোধ চাষিদের। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

ধান রয়েছে, কিন্তু কেনার লোক নেই। কোথাও ক্ষুব্ধ চাষিরা রাস্তায় ধান ছড়িয়ে অবরোধ করছেন। কোথাও আবার দাম না পেয়ে দিনের শেষে হাট থেকে ধান ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। একই হাটে ধানের দু’রকম দাম মেলার অভিযোগও উঠেছে। বাতিল নোটে নিলে যেটুকু দাম পাওয়া যাচ্ছে। নতুন নোট নিলে মিলছে আরও কম দাম।

শনিবার দুপুরে শতাধিক চাষি ধানবোঝাই বস্তা নিয়ে রায়গঞ্জের বারোদুয়ারি এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। জাতীয় সড়কে ধানও ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সরকারকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিন রায়গঞ্জ ব্লকের শীতগ্রাম, রামপুর ও বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকশো চাষি ভ্যান বা ভুটভুটিতে চাপিয়ে ধানের বস্তা নিয়ে বারোদুয়ারি হাটে গিয়েছিলেন। হাটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ধানের দাম না মেলায় অবরোধ শুরু হয়। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েশা রানির আশ্বাস, দ্রুত ন’টি ব্লকে সহায়ক দামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।

পুরানো নোট বাতিলের জেরে হাতের নগদ সবই ব্যাঙ্কে জমা করতে হয়েছে চাষিদের। ফলে টাকার প্রয়োজনে দ্রুত ঘরের ধান বিক্রির হিড়িক পড়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, এই সুযোগে ফড়েরা পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোটে ধান কিনতে চাইছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বার ধানের দামও কমে গিয়েছে কয়েকগুণ। উত্তর দিনাজপুরের বিপ্রডাঙ্গি ও ভট্টদিঘি এলাকার বাসিন্দা দুই চাষি আকতার আলি ও সাদেক আলি এবছর ৫ ও ১০ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় গড়ে ৪ কুইন্টাল করে ধান ফলেছে। তাঁরা জানান, এক কুইন্টাল ধান ফলাতে চাষিদের গড়ে ৮৫০-৯০০ টাকা খরচ হয়।

এ বার প্রতি কুইন্টাল ধানের সরকারি সহায়ক মূল্য ১৪৭০ টাকা স্থির হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষিরা কুইন্টাল প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি। তাঁদের কথায়, ‘‘যে টাকা দেওয়া হচ্ছে তাও পুরোনো নোটে। আমাদের সংসার চলছে না। সহায়ক দামে ধান না কিনলে আমরা বাঁচব না।’’

ইসলামপুরের কৃষকদেরও অভিযোগ, টাকা বাতিলের পর থেকেই ধান বিক্রির বাজারে কালোবাজারি শুরু হয়েছে। প্রতিটি এলাকাতেই ধানের দুই রকম দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। পুরানো নোটে প্রতি কুইন্টালে ৯০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বাতিল নোট না নিলে সেই দামই কমে দাঁড়চ্ছে কুইন্টাল প্রতি ৭০০ টাকায়।

আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের চিত্রটাও একইরকম। সেখানকার বাজার থেকে ধান ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, এসময় ধানের দাম মণ প্রতি ৫০০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ৩০০ টাকার বেশি মিলছে না। পুরানো নোটে দাম কিছু বেশি মিললেও তা নিচ্ছেন না কৃষকেরা। কুমারগ্রামের কৃষক নিতাই দাস জানান, ধান বিক্রির টাকা দিয়ে আলুর বীজ ও সার কিনতে হয় তাঁদের। বাতিল টাকা নিলে তা দিয়ে বীজ ও সার মিলছে না। তিনি বলেন, ‘‘এ যেন শাঁখের করাত। তাই ঘরের ধান ঘরেই ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।’’

দক্ষিণ দিনাজপুরেও ধানের বাজারের পুরোটাই ফড়েদের দখলে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ফড়েদের বেঁধে দেওয়া দামেই ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছেন নিরুপায় চাষিরা। সরকারি সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১৪৭০ টাকা হলেও হাট-বাজারে গিয়ে কুইন্টাল প্রতি ৯০০-৯৫০ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। তবে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘জেলার ৮টি ব্লকের ৮টি কিসান মান্ডি থেকে সহায়ক দামে চাষিদের ধান কেনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE