প্রার্থীদের নিয়ে তৃণমূলের সভায় গৌতম দেব।—নিজস্ব চিত্র।
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই শহরে সরকারি উদ্যোগে একাধিক নাগরিক সভা ডেকে উন্নয়নের খতিয়ান দেওয়া শুরু করেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব। ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশন’-র মাধ্যমে নানা প্রকল্প সভাগুলিতে বাসিন্দাদের সামনে তুলে ধরা হয়। তাতে আবার তৃণমূলের প্রার্থীদের মঞ্চে থাকার অভিযোগ করে বিরোধীরা সোচ্চার হন। তাঁদের যুক্তি ছিল, সরকারি খরচে ভোটের প্রচার করছেন মন্ত্রী। তাঁদের অনেকেই কটাক্ষ করেন, ‘‘নিজেকে মেয়র হিসাবে তুলে ধরতেই মন্ত্রী ওই কাজ শুরু করে ছিলেন।’’ যদিও পরে দলের নির্দেশে গৌতমবাবু অবশ্য ভোটে দাঁড়াতে পারেননি।
কিন্তু প্রকল্পের কাজগুলি আবার শহরের বাসিন্দাদের সামনে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন গৌতমবাবু। তবে তা এবার তৃণমূল প্রচারের অঙ্গ হিসাবে। যা শোনার পর দলের অন্দরে তো বটেই বিরোধীরাও নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তৃণমূলের জেলার কয়েকজন নেতা জানান, প্রথমে সরকারি টাকা খরচ করে ওই প্রচার না করে একেবারেই গোড়়া থেকেই দলীয়ভাবে ওই প্রচার করলে বিরোধীরা নানা কথা বলার সুযোগই পেতেন না। আর যে কোনও রাজনৈতিক দল, তাঁদের সরকারির প্রকল্পের খতিয়ান ভোটে প্রচার করতেই পারে। নির্বাচন কমিশনেরও এ নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই। তা করা হলেই ভাল হত।
তৃণমূল সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থাকে শিলিগুড়ি শহরের নানা সরকারি প্রকল্পের কাজের ভিডিওগ্রাফি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মূলত এসজেডিএ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজই মূলত তাতে থাকছে। রাস্তা, বিদ্যুৎ, সেতু, নিকাশি ব্যবস্থা, সৌন্দর্যায়ন, মাঠ সংস্কারের মতো একাধিক প্রকল্পের কাজের ছবি তুলে সিডি তৈরি করা হচ্ছে। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে প্রোজেক্টর মেশিন দিয়ে তা দেখানো হবে। দলের তরফে কেন্দ্রীয়ভাবে ওই প্রচারের পর প্রতি প্রার্থীকে একটি করে ওই প্রচারের সিডিও তুলে দেওয়া হবে। এর পরে তাঁরা নিজেদের প্রয়োজন মতো এলাকায় তা নিয়ে প্রচার করতেন পারবেন। একটি ছোট ভ্যানে করে ওই প্রচার চালানো হবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে। একইধরণের একটি ভিডিও সরকারি নাগরিক সভাগুলিতেও দেখানো হয়েছিল।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বিরোধীরা তো বটেই নিন্দুকেরা নানা কথা বলেন, ওই সব নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। এবার নানা কৌশলে প্রচার করা হচ্ছে। সভা, মিছিল, বাড়ি বাড়ি ঘোরা ছাড়াও প্রকল্প ভিত্তিক ভিডিও প্রেজেশটেশন, সোসাল মিডিযায় প্রচার হচ্ছে।’’ তিনি জানান, উন্নয়নের কাজের সিডি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তার পরেই মোড়ে মোড়ে দেখানো হবে। এ ছাড়া আমরা কী করেছি, কী করছি তা নিয়ে আলাদা একটি প্রচার পুস্তিকাও ছাপানো হচ্ছে।
তৃণমূলের এই প্রচারকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘মন্ত্রী তো মাঝে মাঝেই বলেন শুনি, মানুষ তাঁদের কাজ না কি সব দেখছেন। তাহলে আবার প্রচারের দরকার কী। আর ভিডিও তুলে প্রচার উনি তো সরকারি টাকায় অনেক করেছেন। এবার কীভাবে করছেন তার দিকে অবশ্যই আমরা নজর রাখব।’’ আবার জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু বলেছেন, ‘‘সরকারি ভিডিও ফিল্মই তৃণমূল ব্যবহার করছে কি না, সেই দিকেই নজর রাখতে হবে। নইলে তো নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, ভিডিওটির মধ্যে অন্যতম প্রায় ১২৮ কোটি টাকা দিয়ে শহরের রাস্তা ম্যাস্টিক করা। এছাড়াও নিকাশির ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক মেশিনের ব্যবহার, রাস্তার এলইডি বাতিস্তম্ভ, বিভিন্ন মোড়ে মিজজিক সিস্টেম, সূযর্সেন পার্কে রক ক্লাইম্বিং এবং টয়ট্রেন চালু নতুন মহানন্দা সেতু, সৌন্দর্যকরণ, পুরসভার নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৈরির মত বিষয়গুলি রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। এরমধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে।
এই প্রসঙ্গে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের সব প্রচার সরকারি টাকায় নানাভাবে হচ্ছে। প্রথমে নাগরিক সভা হয়েছে। তাতে মন্ত্রী মেয়র হবেন ভেবে প্রচার শুরু করেন। এখন ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে সেখান থেকে টাকা তুলে তা প্রচারে ব্যবহার হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy