Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘বাড়ি যাব না, প্রয়োজনে ফাঁসি দিন’

পুলিশ কর্তাদের সাংবাদিক বৈঠক চলছে৷ সেই সময় তাঁদের পাশে বসে ফুপিয়ে কেঁদে চলছে ১৪ বছর বয়সী মেয়েটি৷ সুযোগ পেতেই পুলিশ কর্তাদের কাছে তার কাতর আর্জি, “প্রয়োজনে আমায় ফাঁসি দিন৷ কিন্তু বাড়িতে পাঠাবেন না৷ আমি আর বাবা-মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না৷”

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

পুলিশ কর্তাদের সাংবাদিক বৈঠক চলছে৷ সেই সময় তাঁদের পাশে বসে ফুপিয়ে কেঁদে চলছে ১৪ বছর বয়সী মেয়েটি৷ সুযোগ পেতেই পুলিশ কর্তাদের কাছে তার কাতর আর্জি, “প্রয়োজনে আমায় ফাঁসি দিন৷ কিন্তু বাড়িতে পাঠাবেন না৷ আমি আর বাবা-মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না৷”

আচমকা ওই কিশোরীর এমন আর্জিতে খানিকটা হকচকিয়ে যান পুলিশ কর্তারাও৷ খোদ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, “তোমার কোনও ভয় নেই৷ তুমি বাড়ি ফিরে যাও৷ আমরা নিয়মিত তোমার খোঁজ রাখব৷” খোদ পুলিশ সুপারের সেই আশ্বাসেও যেন ভরসা নেই ওই কিশোরীর৷ ফুঁপিয়ে কেদেই চলছে সে৷ শনিবার এমনি ঘটনা ঘটল জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের দফতরে৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর বাড়ি রাজগঞ্জের মালিপাড়া এলাকায়৷ স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে৷ গত বছর ২৫ ডিসেম্বর আচমকাই কিশোরী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়৷ তার বাড়ির লোকেদের সন্দেহ ছিল, মেয়েকে পাচার করা হয়েছে৷ ২৬ ডিসেম্বর তাঁরা রাজগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন৷ তারপর থেকেই কিশোরীর খোঁজ শুরু করে পুলিশ৷ একজনকে গ্রেফতার করা হলেও তার খোঁজ মেলেনি৷

কিশোরীকে খুঁজতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও যায় পুলিশ৷ খোঁজ চলে দিল্লীতেও৷ তবুও সন্ধান মেলেনি তার৷ এর জেরে বদল করা হয় তদন্তকারী অফিসার৷ তারপর জলপাইগুড়ির ডিএসপি হেডকোয়ার্টার মানবেন্দ্র দাস ও রাজগঞ্জ থানার ওসি সৈকত ভদ্রের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে শিলিগুড়ির জ্যোতিনগর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ৷

পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ২৫ ডিসেম্বর ওই কিশোরী নিজেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়৷ ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় শিলিগুড়ির ঝংকার মোড় এলাকায়৷ সেখানে এক মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়৷ তার বাড়িতেই তিনদিন থাকে৷ তার কাছ থেকে সব ঘটনা শোনার পর ওই মহিলাই তাকে জ্যোতিনগর এলাকার বাড়িটিতে কাজের ব্যবস্থা করে দেন৷

কিন্তু কি সেই ঘটনা? কিশোরীর অভিযোগ, ‘‘আমরা চার বোন এক ভাই৷ বিবাহিত এক বোন বাড়িতেই থাকে৷ তার কথাতেই আমার বাবা-মা সব সময় আমার ওপর অত্যাচার করে৷ মারধরও করে৷ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়েই আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি৷’’ এরপরই বাড়ি না পাঠানোর জন্য পুলিশ কর্তাদের কাছে কাতর আর্জি জানায়।

পুলিশ সুপার জানান, রবিবারই ওই কিশোরীকে আদালতে হাজির করানো হবে৷ তারপর আদালতই ঠিক করবে তাকে কোথায় পাঠানো হবে৷ তবে যদি তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়, তাহলে নিয়মিত পুলিশ তার খোঁজ রাখবে৷ এবং আবারও ওই কিশোরীর ওপর অত্যাচার হলে তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে৷

তবে কিশোরীর বাবা পেশায় দিন মজুর ধনবীর বিশ্বাস কিন্তু অভিযোগ মানতে চাননি৷ তাঁর কথায়, ‘‘কখনও কখনও মেয়েকে শাসন করেছি ঠিকই, কিন্তু কোনওদিন অত্যাচার করিনি৷ ও কেন যে এ কথা বলছে বুঝতে পারছি না৷ আমরা চাই মেয়ে বাড়ি ফিরে আসুক৷ বাড়ি ফিরে এলে অবশ্যই ওকে বোঝাবো৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Girl Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE