Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বৌকে বাঁচান, আর্তি যুবকের

শনিবার বিকেলে সুকনা খোলার সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্তার সামনে যিনি হাতজোড় করেছিলেন তাঁর বাড়ির উঠোনেও বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছিল বলে অভিযোগ। পাথর-পেট্রোল বোমার আঘাতে তিন পুলিশ অফিসার সহ প্রায় ৭ জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

ভাঙচুর: ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের ‘বজ্র’ গাড়ি। সুকনায়। নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুর: ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের ‘বজ্র’ গাড়ি। সুকনায়। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

সবে সন্ধে হয়েছে। আশপাশ থেকে শেল ফাটার আওয়াজ আসছে। অন্ধকার রাস্তায় আছড়ে পড়ছে পেট্রোল বোমা। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পুলিশের গাড়ির সামনে পৌঁছলেন এক যুবক। সামনে এক পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়ে হাতজোড় করে বললেন, ‘‘স্যার! আমার বউকে বাঁচান।’’ জানালেন, তিন দিন পরেই তাঁর স্ত্রীর প্রসবের তারিখ। সকাল বাড়ির ভিতরে নাগাড়ে ঢিল আর শেল পড়ছে। পাথর লেগে সব জানালা ভেঙে গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী ভয়ে ছটফট করছেন। কয়েকবার দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছিল। যুবক বলেন, ‘‘এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে আমার বোধহয় মরেই যাবে।’’

শনিবার বিকেলে সুকনা খোলার সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্তার সামনে যিনি হাতজোড় করেছিলেন তাঁর বাড়ির উঠোনেও বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছিল বলে অভিযোগ। পাথর-পেট্রোল বোমার আঘাতে তিন পুলিশ অফিসার সহ প্রায় ৭ জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। বিকেলের পর পুলিশ অভিযান শুরু করলে হামলাকারীরা কিছুটা পিছু হঠে যায়। সে সময়েই ওই যুবক পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে আসেন।

পুলিশের সঙ্গে মোর্চা সমর্থকদের খন্ডযুদ্ধ চলতে থাকায় সুকনার রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল তখন পুরোপুরি বন্ধ। যুবক জানায়, পুলিশ অনুমতি দিলে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তিনি তাঁর স্ত্রীকে শালবাড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। পুরো ঘটনা শুনে পুলিশ কর্মীরা জানান, অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তারপরে পৌঁছতে অনেক সময় লাগবে। পরিস্থিতি যে কোনও সময়ে অন্য মোড় নিতে পারে। তাই যুবককে পুলিশ কর্মীরা প্রস্তাব দেন, তাঁদের গাড়িতে স্ত্রীকে শালবাড়ি নিয়ে যেতে। ছিলেন শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি সংমিত লেপচা। তিনি সায় দিতে দ্রুত পুলিশের ওয়াকিটকিতে একটি ছোট গাড়িকে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কালো রঙের পুলিশের জিপ এসে পৌঁছয়। পুলিশ কর্মীরাই দু’দিকে ধরে অন্তঃসত্ত্বা বধূকে জিপে তোলেন। গাড়িতে উঠে কেঁদে ফেলেন ওই বধু। বলেন, ‘‘সকাল থেকে যে ভাবে ঘরে, বারান্দায় পাথর পড়েছে। একসময়ে মনে হচ্ছিল পেটের সন্তানকে বুঝি জন্মই দিতে পারব না।’’ জামাকাপড়ের ব্যাগ, ওষুধও তোলা হয় পুলিশের জিপে। একজন অফিসারও ওঠেন গাড়িতে। বধূ, তাঁর স্বামী সকলকে নিয়ে শালবাড়ি পৌঁছে দেয় পুলিশের জিপ। পেশায় ব্যবসায়ী ওই যুবক পরে বলেন, ‘‘পুলিশের এই ভূমিকার কথা সারাজীবন মনে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE