মাসিদুর রহমান।
সোমবার দুপুরে ছিল বিয়ে। রবিবারই বাড়িতে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রাতে ঝলমলিয়ে উঠেছিল আলোর রোশনাই। বিয়ে উপলক্ষ্যে আসা আত্মীয়-স্বজনের ভিড়ে বাড়ি গমগম করছিল। আর সেই রবিবার রাতেই ঘটে গেল অঘটন। রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ প্যান্ডেলে জড়িয়ে থাকা তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল পাত্রের।
তড়িদাহত ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে দাদাও আহত হল। রবিবার রাতে এ ঘটনা কালিয়াচক ২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বনকুল গ্রামের। বিয়ের আগের রাতে পাত্রের মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত পাত্রের নাম মাসিদুর রহমান (২১)। আহত দাদার নাম সালাম শেখ। রাতে তাঁকে প্রথমে বাঙিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে সে বাগরুদ্ধ। পঞ্চানন্দপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বনকুল গ্রামের বাসিন্দা সইফুদ্দিন শেখের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান মাসিদুর।
মাসিদুর পেশায় দিনমজুর। পারিবারিক সূত্রে খবর, মাসিদুরের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশেরই বাঙিটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিমবাজার সিংহপাড়ার এক পাত্রীর সঙ্গে। সোমবার বেলা ১১টায় জনা পঞ্চাশেক বরযাত্রী নিয়ে মাসিদুরের বিয়ে করতে যাওয়ার কথা। মঙ্গলবার বৌভাত। বরযাত্রী ও বৌভাতের জন্য এলাকার বাসিন্দা এবং আত্মীয়দের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। রবিবার সকাল থেকে আত্মীয়রা বাড়িতে আসতেও শুরু করেন। এ দিকে শনিবার সকাল থেকে বাড়িতে প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হয়। রবিবার বিকেলের মধ্যে তা শেষও হয়। সন্ধ্যা হতেই আলোয় ঝলমল করে উঠেছিল গোটা বাড়ি।
প্রতিবেশী মোরসেলিম শেখ, জাহাঙ্গির হাসান, জিয়াউল হক, বাদল শেখরা জানান, রাত প্রায় ১১টা নাগাদ বাড়িতে তৈরি প্যান্ডেলেই ঘোরাফেরা করছিলেন মাসিদুর। আচমকা প্যান্ডেলে লেগে থাকা তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হন। তাঁর চিত্কারে তাঁর মেজদাদা সালাম শেখ ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও বিদ্যুত্পৃষ্ট হন। শেষপর্যন্ত পাশেরবাড়ির মোজাম্মেল হক এসে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। প্রতিবেশী ও বাড়ির লোকজন দুই ভাইকে উদ্ধার করে বাঙিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওযার পথেই মাসিদুরের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি সালাম শেখ ভাইয়ের মৃত্যুতে কথাই বলতে পারেননি। ছেলের মৃত্যুতে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছে। মা খইমন বিবি বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন।
বাবা সইফুদ্দিন বলেন, ‘‘বিয়ের আগের রাতেই ছেলে এ ভাবে চলে যাবে, তা ভাবতেই পারছি না।’’ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য দুলাল শেখ বলেন, ‘‘আমরাও শোকাহত।’’ এ দিকে হবু পাত্রের এমন ঘটনা শুনে রাতেই বাঙিটোলা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন পাত্রীর বাবা, মা ও আত্মীয়রা। তাঁরাও শোকাহত। পাত্রীর এক আত্মীয় বলেন, এমন ঘটনায় মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ছে। রাত থেকে তাঁকে কিছু খাওয়ানো যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy