Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অভিযুক্তকে হাতে চেয়ে বিক্ষোভ জলপাইগুড়িতে

এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত এক যুবককে তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে শোরগোল ফেলে দিলেন ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজন।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে বিক্ষোভরত জনতা। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে বিক্ষোভরত জনতা। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত এক যুবককে তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে শোরগোল ফেলে দিলেন ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজন।

জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র বাণিজ্য কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শঙ্কর চন্দের বিরুদ্ধে ওই শহরেরই দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানার পুলিশ শঙ্করকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে লোকজন। বেলা ১২টা থেকে প্রায় ২০ মিনিট ওই বিক্ষোভ চলে। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শঙ্করের বাবাকেও এ দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলেকে প্রশ্রয় দেওয়া ও ছেলের হয়ে ছাত্রীকে বিয়ের মিথ্যে আশ্বাস দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মনু চন্দ। ওই সময় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র দলীয় কাজে শহরে গেলে ছাত্রীর পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। শুক্রবার অভিযুক্ত শঙ্করকে আদালতে তোলা হলেও তাঁর পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিল না। মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক শান্তনু দত্ত ‘প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের’ (পকসো) ১৪ নম্বর ধারায় মামলাটি বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত করে অভিযুক্তকে সোমবার পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী শান্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুলিশের আবেদন মতো মামলায় প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের ১৪ নম্বর ধারা যুক্ত হয়েছে। সোমবার মামলাটি বিশেষ আদালতে উঠবে। মৃত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষের আইনজীবী সুজিত দাস বলেন, “বিরাট ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মেয়েটি। বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।”

এদিন বেলা ১২টা নাগাদ ধৃত ছাত্র নেতাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অভিযুক্তকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামাতে বেশ সময় লেগে যায়। এলাকার বাসিন্দারা এক সময় অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করে।

তবে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র নেতা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ছয় মাস ধরে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। তাঁর বাড়ির লোকজনের আপত্তিতে সম্পর্ক ভেঙে যায়। আত্মহত্যার চেষ্টা করার দিন ফোন করে দেখা করতে বলে। আমি দেখা করিনি। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে সে অন্য ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত।” ছাত্রীর পরিবার থেকে এদিনও ধৃত ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে আপত্তিজনক ছবি তোলার অভিযোগ তোলা হয়। যদিও ছাত্র নেতা ওই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “পুলিশি তদন্তে সমস্ত বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমার ফেসবুক আইডি, মোবাইল ফোন পুলিশকে দিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি দেওয়া হবে, সেটা মেনে নেব।”

প্রায় তিন বছর আগে শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা শঙ্করের সঙ্গে ৩ নম্বর গুমটি এলাকার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে সম্প্রতি তাঁদের সম্পর্কের অবনতিও হয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীটি বাড়িতে ওড়নার ফাঁসে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। প্রায় একমাস জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিত্‌সার পরে গত ২৪ মার্চ দুপুর নাগাদ ছাত্রীটি মারা যায়। ছাত্রীর পরিবার গত ২৫ মার্চ রাতে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, প্রথম দিকে ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও পরবর্তীতে তাঁর মা ও বাবার বিরুদ্ধেও ছেলেকে প্রশ্রয় এবং ছেলের হয়ে ছাত্রীকে বিয়ের মিথ্যে আশ্বাস দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়। শুক্রবার বিকেলে শহরের বেগুনটারি এলাকা থেকে ছাত্র নেতার বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের ওসি কেএল শেরপা বলেন, “ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের মায়ের খোঁজ মেলেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE