Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

এসি গাড়িতে জলপাইগুড়ির কাঁঠাল যাচ্ছে দিল্লি, মুম্বই

বাতানুকূল গাড়িতে চেপে জলপাইগুড়ি জেলার কাঁঠাল পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি, মুম্বই। যাচ্ছে বিহার উত্তরপ্রদেশেও। জেলার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রিত বাজার, হাটে ইতিমধ্যেই কাঁঠালের ভরপুর জোগান শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার জুড়ে কাঁঠালের দাপট দেখা গেল। গ্রাম ও চা বাগান এলাকার লোকজন গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে হাজির সেখানে।

ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে বিকোচ্ছে কাঁঠাল। মঙ্গলবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে বিকোচ্ছে কাঁঠাল। মঙ্গলবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

বাতানুকূল গাড়িতে চেপে জলপাইগুড়ি জেলার কাঁঠাল পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি, মুম্বই। যাচ্ছে বিহার উত্তরপ্রদেশেও।

জেলার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রিত বাজার, হাটে ইতিমধ্যেই কাঁঠালের ভরপুর জোগান শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার জুড়ে কাঁঠালের দাপট দেখা গেল। গ্রাম ও চা বাগান এলাকার লোকজন গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে হাজির সেখানে। ভিড় করেছেন বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির ক্রেতারাও। ওজনের পরে কাগজে মুড়ে বিশেষভাবে প্যাকেট করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে কাঁঠাল। গত জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে ওই কারবার। চলবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। পাইকারি ব্যবসায়ী সুবল দাস বলেন, “এতদিন ধারণা ছিল শুধুমাত্র বাঙালিরা কাঁঠাল পছন্দ করে। গত তিন বছরে সেই ধারণা পাল্টেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোজন রসিকদের কাছে ক্রমশ কাঁঠালের কদর বেড়ে চলেছে।”

কতটা চাহিদা বেড়েছে সেটা ব্যবসায়ীদের হিসেবে স্পষ্ট। তাঁরা জানান, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন হাট থেকে প্রায় তিনশো টন কাঁঠাল ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। তিন বছর আগে এমনটা কেউ ভাবতে পারেনি। জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ‘অ্যাট্রকার্পাস’ গোত্রের ‘মালবেরি’ পরিবার ভুক্ত কাঁঠাল গাছ রয়েছে। বিজ্ঞানের পাতায় ‘অ্যাট্রকার্পাস হেটারোফাইলাস’ নামে পরিচিত ওই ফলের দুই জেলায় বার্ষিক গড় উৎপাদন ৩ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন। জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক শুভাশিস গিরি বলেন, “ভিন রাজ্যে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার কাঁঠালের চাহিদা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীণ ওই ফলকে ঘিরে ভাল ব্যবসা গড়ে উঠেছে।”

ভিন রাজ্যে গেলেও বিদেশের বাজারে জেলার কাঁঠাল যাচ্ছে এমন খবর এখনও জেলা উদ্যান পালন দফতরে নেই। যদিও কাঁচা কাঁঠালের রেসিপি সমাদৃত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে। স্বাদ ও গুণাগুণের জন্য বাংলাদেশ ওই ফলকে জাতীয় ফলের মর্যাদা দিয়েছে। সেদ্ধ কাঁচা কাঁঠাল ‘টাম কানুন’ স্যালাড নামে বিখ্যাত উত্তর থাইল্যান্ডে। পশ্চিমবঙ্গে এঁচোড় নামেই যা বেশি পরিচিত। অনেকে একে ‘গাছপাঁঠা’ও বলে থাকেন।

জলপাইগুড়ি জেলায় কাঁঠালের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে ময়নাগুড়িতে। মালবাজার, নাগরাকাটা, মেটেলি, ওদলাবাড়ি থেকে এখানে প্রতিদিন রাশি রাশি কাঁঠাল আসছে। একদল যুবক গ্রামে ঘুরে কাঁঠাল কিনে পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিয়ে রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী জ্যোতি অধিকারী জানিয়েছেন, ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার, রোডহাট, রাজারহাট থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একশো ট্রাক কাঁঠাল ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয়। জেলার ধূপগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার, ফাটাপুকুর থেকেও কাঁঠালের গাড়ি বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, কাঁচা কাঁঠালের কদর বেশি নেপাল, বিহারের সিওয়ান, দ্বারভাঙ্গা, সীতামঢ়ী, পটনায়। এ ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ এবং মুম্বইতেও যাচ্ছে কাঁঠাল। পাকা কাঁঠালের চাহিদা বেশি দিল্লিতে। পাইকারি ব্যবসায়ী বলরাম সর্দার বলেন, “সপ্তাহে দশটি এসি লাগানো ট্রাকে আধপাকা কাঁঠাল দিল্লিতে পাঠানো হয়।”

তবে পাকা কাঁঠাল হলেই চলবে না। জাত বিচারে ওই ফলের স্বাদ ও গন্ধে তারতম্য রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, রুদ্রাক্ষী, বারোমাসি, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারি কাঁঠালের চাহিদা বেশি। চা বাগান ও বনবস্তি এলাকা থেকে গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ জাতের কাঁঠাল আসছে। মঙ্গলবার পাইকারি বাজারে চার টাকা কেজি দামে কাঁচা কাঁঠাল কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। বিহারের সিমান এলাকার ব্যবসায়ী দিনলাল শর্মা বলেন, “পরিবহনের খরচ ধরে খুচরো বাজারে ওই কাঁঠাল ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE