আশ্রম: নিবেদিতা দার্জিলিঙের রামকৃষ্ণ মিশনের এই ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বুধবার হামলা হয় এই ঘরেও। ফাইল চিত্র
হামলার অভিযোগ উঠল দার্জিলিঙের রায় ভিলায়। বুধবার গভীর রাতে রামকৃষ্ণ মিশনের এই ভবনে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনে রামকৃষ্ণ মিশন নানা জন কল্যাণমূলক কাজ চালায়। ঘরের আসবাবও ভাঙচুর করা আশ্রমের প্রণামী বাক্স ভেঙে টাকা নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় দার্জিলিং জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। তবে পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এর সঙ্গে পাহাড়ের আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই।
১৯১১ সালের ১৩ অক্টোবর এই বাড়িতেই মারা যান নিবেদিতা। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ‘রায় ভিলা’ বাঙালির স্মৃতি স্মারক। তাঁর সার্ধ শতবর্ষে সমগ্র দেশবাসী যখন তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছে ঠিক এ সময়ে ভাঙচুর করা হল ইউনির্ভাসাল প্রেয়ার হল এবং নিবেদিতা যে ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন, তার জানালা দরজা। ভাঙা হয়েছে কাচগুলিও।
বাড়িটি ২০১৩ সালের ১৬ মে রামকৃষ্ণ মিশনকে হস্তান্তর করা হয়। ১০ জুলাই সংস্কার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি দ্বারোদ্ঘাটন হয় বাড়িটির। এখন ওই বাড়িতে রামকৃষ্ণ মিশন নিবেদিতা এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার চালায় রামকৃষ্ণ মিশন।
জগদীশচন্দ্রের স্ত্রী অবলা বসুর ভগ্নীপতি দ্বারকানাথ রায়ের বাড়ি এই রায়ভিলা। নিবেদিতা কখনও অবসর যাপন করতে, কখনও ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধারের আশায় আশ্রয় নিতেন। সঙ্গী হতেন বসু দম্পতি। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কেটে যেত দিনগুলি। কখনও নিজের খেয়ালে ঘুরে বেড়াতেন রয়ভিলার কাছাকাছি লেবং, সিংমারী পাহাড়ি গ্রামগুলিতে। পাহাড়ি মানুষদের সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, ‘‘এঁরা সকলেই সাহসী, পরিশ্রমী ও ধর্মপ্রাণ।’’ কখনও বা সহযোগিতা করছেন জগদীশচন্দ্রের গবেষণাপত্র তৈরির কাজে।
১৯১১ সালে আমেরিকা থেকে ফিরে নিবেদিতার শরীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। আরোগ্যের জন্য জগদীশচন্দ্রের প্রস্তাব মেনে তাঁর দার্জিলিং যাত্রা। বসু দম্পতি আগেই পৌঁছে গেলেন দার্জিলিংয়ে।
২১ সেপ্টেম্বর মিস্টার ও মিসেস এস কে রাটক্লিফকে চিঠিতে জানাচ্ছেন, পরের দিনই তাঁরা বেরোচ্ছেন। পরিকল্পনা ছিল সিকিম সফরে যাবার। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। যাত্রা মুলতুবি রইল। রোগাক্রান্ত নিবেদিতার সেবা যত্নের ভারটি নিয়েছিলেন বসুজায়া। নিবেদিতা বুঝতে পেরেছিলেন শেষের দিন সমাগত। মৃত্যুকে রোধ করা যাবেনা। তারই ভাষায় ‘‘লেট দেয়ার বি নো হাইডিং আ্যন্ড ডোন্ট ট্রাই টু প্রোলং।’’ ৭ অক্টোবর তাঁর নির্দেশ মতো উকিল ডাকা হল, দানপত্র তৈরি করলেন।
সঞ্চিত অর্থ, গ্রন্থস্বত্ব থেকেভবিষ্যতে আয়ের অর্থ ও নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য তুলে দিলেন বেলুড় মঠের ট্রাস্টিদের হাতে। অন্তিম প্রহরে বুদ্ধ বাণী পাঠ করে শোনালেন অবলা। নিবেদিতার নিস্তেজ কন্ঠ বেয়ে উপনিষদের বাণী। বললেন ‘‘তরণী ডুবছে, আমি কিন্তু সুর্যোদয় দেখব।’’ ১৩ অক্টোবর খুলে ফেললেন অক্সিজেনের নলটি। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন শৈলশহরের কোলে রায় ভিলায়।
সেই বাড়িটিতেই হামলার খবরে বিমর্ষ পাহাড়, সমতল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy