Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দীর্ঘদিন এক সঙ্গে থাকার পরে বিবাহ, উদ্যোগ বীরপাড়ায়

পাঁচ বছর আগে ভুটান সীমান্ত শহর জঁয়গাতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করার সময় হাসিমারা চা বাগানের মিনতি ওঁরাও এর সঙ্গে পরিচয় হয় চণ্ডুর। চণ্ডুও তখন একই কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এক দিন চণ্ডু তাঁর বাড়িতে মিনতিকে নিয়ে যান। সেই থেকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। তাঁদের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। সে তিন বছরে পা দিয়েছে।

জয়গাঁর চন্দ্র ওঁরাও ও হাসিমারার মিনতি ওঁরাও (পাশাপাশি বসে ) পাঁচ বছর এক সঙ্গে বসবাসের পর তিন বছরের পুত্র লেখককে কোলে নিয়ে সাহরুল পরবে ডুয়ার্সের বীরপাড়ায় অনুষ্ঠিত গণবিবাহে বিয়ে করলেন। ছবি: রাজকুমার মোদক।

জয়গাঁর চন্দ্র ওঁরাও ও হাসিমারার মিনতি ওঁরাও (পাশাপাশি বসে ) পাঁচ বছর এক সঙ্গে বসবাসের পর তিন বছরের পুত্র লেখককে কোলে নিয়ে সাহরুল পরবে ডুয়ার্সের বীরপাড়ায় অনুষ্ঠিত গণবিবাহে বিয়ে করলেন। ছবি: রাজকুমার মোদক।

নিলয় দাস
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে ভুটান সীমান্ত শহর জঁয়গাতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করার সময় হাসিমারা চা বাগানের মিনতি ওঁরাও এর সঙ্গে পরিচয় হয় চণ্ডুর। চণ্ডুও তখন একই কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এক দিন চণ্ডু তাঁর বাড়িতে মিনতিকে নিয়ে যান। সেই থেকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। তাঁদের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। সে তিন বছরে পা দিয়েছে। তবে সমাজে স্বামী স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে রীতি মেনে পুরোহিত ডেকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে এবং লোকজনকে খাওয়াবার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি অভাবী চণ্ডু ও মিনতির। তা নিয়ে দুশ্চিন্তাতেও ছিলেন তাঁরা।

রবিবার বীরপাড়ায় সেই আশা পূর্ণ হল তাঁদের। শুধু চণ্ডু ওঁরাও বা মিনতির গল্প নয়। তাদের মতো সঞ্জিত রহতিয়া আর শোভা রহতিয়া, নাংডালা বাগানের আকাশ এক্কা এবং সুরজমনি এক্কার মতো আশি জোড়া পাত্র পাত্রী দীর্ঘ দিন এক সঙ্গে কাটানোর পরে বিয়ে সম্পন্ন হল। তাঁরা ছাড়াও আরও ২১ জোড়া নবদম্পতির বিয়ে হয়েছে।

আদিবাসী সমাজে মন্ত্র পড়ে বিয়ে না করেও এক সঙ্গে থাকা খুব কিছু অস্বাভাবিক নয়। সাপ্তাহিক বাগান বন্ধের দিন হাটে এক বাগানের যুবকের সঙ্গে অন্য বাগানের যুবতীর পরিচয় ও সেখানে ভালবেসে যুবতীকে ঘরে নিয়ে আসার ঘটনা বিরল নয়। তারপরে সারা জীবন বিয়ে না করে এক সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।

তবে ছেলে বা মেয়ে বড় হলে যখন তাঁদের বিয়ে দেবার জন্য খোঁজ খবর শুরু হয়, সে সময় কনে পক্ষ বা পাত্র পক্ষ বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছে কি না, তার খোঁজ করেন। মা-বাবার বিয়ে না হলে বিয়ে ভাঙার ঘটনা আজও প্রচুর ঘটছে। হত দরিদ্র চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে নিজেদের বিয়ের আয়োজন করার সামর্থ্য থাকে না। সে জন্য গত দশ বছর ধরে বীরপাড়ার সারনা এস টি ক্লাব নামে সংস্থার লোকজন এই ধরনের গণ বিবাহের আয়োজন করে আসছে।

রবিবার শাল গাছকে সাক্ষী রেখে সাহরুল পুজোর পাশাপাশি রীতিমতো ধামসা-মাদলের তালে তাল মিলিয়ে কানে শিমুল ফুল গুঁজে মহিলারা নাচ গান করে বিবাহ উৎসবকে অন্য মাত্রা এনে দেন। শিকারপুর, শোনগাছি, আইবিল, নাগরাকাটা, বীরপাড়া, নাংডালা, কালচিনি সহ সমগ্র ডুয়ার্স থেকে এসেছিলেন পাত্র-পাত্রীরা। বর কনের জন্য নতুন ধুতি, শাড়ি, চুড়ি, মালা ও টোপর মুকুট পরিয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে তাদের বিবাহ বাসরে নিয়ে আসা হয়। তাদের সঙ্গে আসা কণে পক্ষ ও পাত্র পক্ষের লোকজনের অভ্যর্থনার যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, সে বিষয়ে সমান ভাবে নজর ছিল কর্তৃপক্ষের। লুচি, তরকারি আর কয়েক রকমের মিষ্টি পেট পুরে খাওয়ানো হয় তাদের। বিয়ে দেখতে কয়েক হাজার লোকজন জড়ো হন সারণা ময়দানে।

গণ বিবাহ কমিটির সভাপতি বুধুয়া লাকড়ার কথায়, ‘‘সামাজিক স্বীকৃতি পেতে বিয়ের জন্য এক জন দরিদ্র শ্রমিককে কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এটা উপলব্ধি করার পর আমরা কয়েকজন মিলে গণ বিয়ের আয়োজন করি। চাঁদা তুলে আজও গণ বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোকজন আমাদের সমর্থন করছেন।’’ বিয়ের পর মিনতি ওঁরাও এবং চণ্ডু উভয়ই বললেন, ‘‘যাক এবার আমাদের বিয়েটা হল। আর ছেলের বিয়ে নিয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE