Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জীবন

ব্যতিক্রম মালদহ, তীব্র গরমে ছুটি গৌড়বঙ্গে

সরকারি ভাবে বর্ষা এখনও উত্তরবঙ্গে ঢোকেনি, সিকিমে এসে আটকে রয়েছে। তার আগেই লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার রাত থেকেই জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ইসলামপুরেও কাছাকাছি সময়ে বৃষ্টি শুরু হয়। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়িতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির সঙ্গে রাতেই ঝড় চলতে থাকে কোচবিহারে।

বৃষ্টিতে সুনসান দার্জিলিং ম্যাল।

বৃষ্টিতে সুনসান দার্জিলিং ম্যাল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

সরকারি ভাবে বর্ষা এখনও উত্তরবঙ্গে ঢোকেনি, সিকিমে এসে আটকে রয়েছে। তার আগেই লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা।

মঙ্গলবার রাত থেকেই জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ইসলামপুরেও কাছাকাছি সময়ে বৃষ্টি শুরু হয়। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়িতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির সঙ্গে রাতেই ঝড় চলতে থাকে কোচবিহারে। কিছু বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়, উপরে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ। বাজ পড়ে এক মহিলা জখমও হয়েছেন কোচবিহার শহরে। রায়ডাক নদীর জল বাড়তে থাকায় নদীর পাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে আনার কাজ চলছে। রাতভর বৃষ্টির পরে এ দিন সকালেও জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতেও বৃষ্টি চলেছে। শিলিগুড়িতে তুলনামুলক কম বৃষ্টি হলেও, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। এই পাঁচটি শহরেই বৃষ্টির পরিমাণ একশো মিলিমিটার ছাপিয়ে গিয়েছে। বুধবার বিকেলে শিলিগুড়িতেও বৃষ্টি হয়েছে।

উত্তরের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মালদহের বাসিন্দাদের। জেলায় তীব্র দাবদাহ থাকায় সাতদিন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য গোপাল মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরম পড়েছে জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবে সমস্ত বিভাগের অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’’ দিনভর মেঘের আনাগোনা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি বালুরঘাটেও।


মেঘের আনাগোনাই সার। বৃষ্টি পেল না বালুরঘাট।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছুদিন ধরেই বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে জলীয় বাষ্প আসতে শুরু করেছিল। বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হলেও কোনও নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত না থাকায় কয়েক পশলার বেশি বৃষ্টি হয়নি। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে একটি সিকিমের আকাশের উপরে একটি নিম্নচাপ সক্রিয় হওয়াতেই টানা বৃষ্টি শুরু হয়। পাহাড় এবং সমতল দু’জায়গাতেই বৃষ্টি হওয়ায় ডুয়ার্সের নদীগুলির জল বাড়লেও বিপদসীমার অনেকটাই নীচ দিয়ে বয়েছে। দু’দিন আগে তিস্তা নদীর দোমহনি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত জারি করা হলুদ সঙ্কেত এ দিনও ছিল। অন্য নদীগুলিতে কোনও সঙ্কেত নেই বলে বুধবার বিকেলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের তিস্তা নদী লাগোয়া এলাকায় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। তোর্সা, রায়ডাক, কালজানি, গদাধর, মানসাই নদীর জলও বাড়ছে। বৃষ্টির ফলে কোচবিহার শহর এলাকার বিভিন্ন এলাকাতেও জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড, স্টেশন রোড, সুভাষপল্লি, পুরানো পোস্টাপিস পাড়া, বাদুর বাগান, মন্টুদাসপল্লি-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। তুফানগঞ্জের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে রায়ডাক চর এলাকায় শতাধিক পরিবার জলবন্দি। ইতিমধ্যে একটি ত্রাণ শিবিরে বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তুফানগঞ্জের বালাভূতেও কালজানি নদী সংলগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে জেলা জুড়ে ঝড়ও হয়েছে। বক্সিরহাটে বিদ্যুতের খুটি ঊপড়ে যায়। বাজ পড়ে বিদ্যুতের যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়ে কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি এলাকায়। দেবীবাড়ি, মন্টুদাসপল্লিতে গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। কালীঘাট রোড এলাকায় একটি বাড়িতে বাজ পড়ে মজিরুল বিবি নামে এক মহিলা জখম হয়েছেন। তাঁকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য বলেন, “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। কোথায় কি হয়েছে তা দেখা হচ্ছে।”

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত আলিপুরদুয়ারও। তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, গদাধর, চেকো, ডিমা,ও সঙ্কোশ-সহ সব নদীতেই জল বেড়েছে। হঠাৎ জল বেড়ে যাওয়ায় রায়ডাক ও সঙ্কোশ নদীর বেশকিছু অসংরক্ষিত এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেখা দিয়েছে। আলিপুরদুয়ার শহর রক্ষাকারী বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেচ দফতর বুধবার সকাল থেকে বালি পাথর ফেলে সেগুলি মেরামত করার কাজ শুরু করেছে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে শহরের সিংহভাগ এলাকা। সকাল বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর কয়েকটি ওয়ার্ডের জল দুপুরের মধ্যে বিভিন্ন স্লুইস গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে কালজানি ও নোনাই নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় সব ওয়ার্ডের জল বের হওয়ার পথ পায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর পুরসভা ভাড়া করে সাতটি পাম্প মেশিন এনেছিল। এ বছর কোনও পাম্প মেশিনের ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। জলবদ্ধতার সময় কাটাতে পুরসভা বা প্রসাশন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিস দত্ত বলেন, ‘‘পাঁচটি পাম্প মেশিন কেনার জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেগুলি আমরা হাতে পাব।’’

কুমারগ্রাম ব্লকের সঙ্কোশ চা বাগান, উত্তর ও মধ্য হলদিবাড়ি, লক্ষ্মীবাড়ি, পূর্ব শালবাড়ি, রিটার্নপাড়া, নিমাইপাড়া এবং বলগুড়ি, ধনতলি, অমরপুর, মরাখাতার কিছু অংশে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝড় ও বৃষ্টিতে ইসলামপুর শহর সহ ইসলামপুর মহকুমার চোপড়া-সহ বিভিন্ন এলাকাতে। মঙ্গলবার গভীর রাতে বৃষ্টির সময় থেকে এলাকাতে বিদ্যুত পরিষেবা বন্ধ ছিল। এদিন সকালেও শহরের বেশ কিছু এলাকাতে বিদ্যুত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।

জলপাইগুড়ি শহরের চারটি ওয়ার্ড জলবন্দি হয়ে পড়ে। মহামায়াপাড়া, ইন্দিরা কলোনি, সারদাপল্লি এলাকায় জল জমে যায়। দফায় দফায় বৃষ্টি হয়ে জল জমতে দেখা যায় অনেক এলাকাতেই। শিলিগুড়ির ৩১, ৩২ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নীচু এলাকা অনেক বেলা পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে ছিল। জল জমে ছিল ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের দার্জিলিং মোড় লাগোয়া এলাকায় জল জমে ছিল বিকেল পর্যন্ত জল নামেনি। শিলিগুড়ি লাগোয়া কাওয়াখালি ও শুশ্রুতনগরে একাধিক এলাকায় জল জমে ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ির ধনতলা এলাকাতেও এদিন কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে যায়।

বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিঙেও। এ দিন বৃষ্টিভেজা ম্যালে পর্যটকদের আনাগোনা তেমন ছিল না। তবে তার মধ্যেও অনেক পর্যটকই চিড়িয়াখানায় ভিড় জমান।

ছবি: রবিন রাই, সন্দীপ পাল, রাজকুমার মোদক, হিমাংশুরঞ্জন দেব ও বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE