Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মহাসঙ্কটে প্রসূতিরা

সোমবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরে নৌকাতেই সন্তানের জন্ম দেন এক বধূ। মালদহে কোমর জল ভেঙে গিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলেও সদ্যোজাতকে নিয়ে কোথায় মাথা গুঁজবেন, তা ভেবেই আকুল মা।

আশ্রয়: স্পিডবোটে জন্মের পরে হাসপাতালে শিশু।— নিজস্ব চিত্র।

আশ্রয়: স্পিডবোটে জন্মের পরে হাসপাতালে শিশু।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৯:১০
Share: Save:

বন্যার জল নামেনি এখনও। তার জেরেই সঙ্কটে প্রসূতিরা। কোথাও হাসপাতালে পৌঁছতেই পারছেন না তাঁরা, কোথাও বা কোনওরকমে হাসপাতালে পৌঁছলেও প্রসবের পরে মা-শিশুর ঠাঁই নিেয় চিন্তা কাটছে না।

সোমবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরে নৌকাতেই সন্তানের জন্ম দেন এক বধূ। মালদহে কোমর জল ভেঙে গিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলেও সদ্যোজাতকে নিয়ে কোথায় মাথা গুঁজবেন, তা ভেবেই আকুল মা।

দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের মুশল এলাকায় আটকে পড়া বানভাসিদের সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা উদ্ধার করেন সন্তানসম্ভবা বছর কুড়ির বধূ লিপিকা নুনিয়া সিংহকে। প্রসব যন্ত্রণায় কাতর ওই বধূকে নিয়ে তাঁর আত্মীয়রা জল ভেঙে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও শেষপর্যন্ত স্পিডবোটেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন লিপিকা। জেলার উপ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাসের নেতৃত্বে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানেই ছিলেন। প্রসূতিকে তারা হরিরামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছেন।

গত ১৫ অগস্ট থেকে জেলার বন্যা কবলিত এলাকার সন্তানসম্ভবা মহিলাদের প্রসবের সম্ভাব্য দিন দেখে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়। বন্যার সময় বাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রসব এড়াতে জলবন্দি এলাকা থেকে গর্ভবতী মায়েদের উদ্ধার করে এনে সরকারি ব্লক এবং গ্রামীণ হাসপাতালে রেখে প্রসব করানোর এই কর্মসূচিতে সাড়া মিলেছে বলে দাবি অশোকবাবুর।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বানভাসি কুশমণ্ডি ব্লক হাসপাতালে বন্যার আগের সপ্তাহে ৩৯ জনের প্রসব করানো হয়। ১৫ অগস্ট থেকে ২১ অগস্ট বন্যার সাতদিনে বানভাসি কুশমণ্ডি ব্লকের ৬২ জন মহিলার সন্তান প্রসব হয়েছে ব্লক হাসপাতালে। একইভাবে হরিরামপুরে বন্যার আগের সপ্তাহে ২১টি এবং বন্যার সাতদিনে ৩৮ জনের প্রসব করানো হয়েছে। জলে ডুবে থাকা বংশীহারি ব্লকের রসিদপুর গ্রামীণ হাসপাতালে একইভাবে বন্যার আগের সপ্তাহে ১৮টি এবং পরের সপ্তাহে ২৭ জন মহিলা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

বাড়িতে কোমর সমান জল পুরাতন মালদহের সোনাপল্লির বাসিন্দা মিতা প্রমাণিকের। প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় সেই জল ভেঙে নিয়ে গিয়েই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মিতাদেবীকে। সোমবার রাত সাতটা নাগাদ তিনি পুরাতন মালদহের মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে জন্ম দেন কন্যাসন্তানের। তবে রাত থেকেই মহানন্দা নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে হাসপাতালে। তাই মিতা-সহ অন্যান্য প্রসুতিদেরও ছুটি দিয়ে দেন চিকিৎসকরা। তাই আক্ষরিক অর্থেই এখন অথৈ জলে মিতা। সদ্যোজাতকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন ভেবে চিন্তিত মিতার মা দিপালী সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের উঁচু স্থানে অনেকে ত্রাণ শিবির করে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মতো আমাদেরকেও আশ্রয় নিতে হবে ত্রাণ শিবিরে।’’

কিন্তু মহানন্দা নদীর জলে ভাসছে পুরাতন মালদহ শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড। গত, চারদিন ধরে মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রতিক্ষালয়, জেনারেটার রুম সহ উঁচু স্থানে ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক বানভাসি পরিবার। তবে গত, রাত থেকে ঘুম ছুটেছে তাঁদের। সবিতা সরকার, রিমা দাসেরা বলেন, ‘‘জল যে ভাবে বাড়ছে তাতে হাসপাতালে কত দিন থাকতে পারব বুঝতে পারছি না। হাসপাতালেও জল ঢুকেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE