Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মেধা তালিকায় মেহেদ, সৌরদীপ, মৃগাঙ্কও

মাধ্যমিকে প্রথম দশের সম্ভাব্য তালিকায় সৌভিক বর্মনের সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে কোচবিহারের আরও তিন কৃতী ছাত্রও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৪:২৪
Share: Save:

মাধ্যমিকে প্রথম দশের সম্ভাব্য তালিকায় সৌভিক বর্মনের সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে কোচবিহারের আরও তিন কৃতী ছাত্রও। সম্ভাব্য প্রথম মাথাভাঙার সৌভিক বর্মনের (৬৮৩) সঙ্গে ওই কৃতীদের সাফল্য নিয়েও খুশির জোয়ারে ভাসছেন জেলার বাসিন্দারা। ওই ‘ত্রয়ী’দের দু’জন কোচবিহার জেনকিন্স স্কুলের ছাত্র। তাদের মধ্যে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য নবম সৌরদীপ দাস (৬৭৫)। ওই স্কুলের ছাত্র মেহেদ উজ জামান ও দিনহাটার গোপালনগর এমএসএস হাইস্কুলের ছাত্র মৃগাঙ্ক বসু মেধা তালিকায় রাজ্যে সম্ভাব্য দশম স্থানে রয়েছে। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪। এ দিন সকালে টিভিতে ওই কৃতীদের সাফল্য ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবেশীদের ভিড় শুরু হয়। অভিনন্দন জানানর হিড়িক পড়ে যায়। স্কুল থেকে বাড়ি-সর্বত্র চলে মিষ্টিমুখের পালা। শিক্ষক থেকে সহপাঠীরা অনেকেই ‘ত্রয়ী’র সঙ্গে ছবিও তোলে।

পর্ষদ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এ বছর ১২০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে। তাদের সবাই পাশ করেছে। সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে স্কুলের সৌরদীপ দাস। তার বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর—বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৯১, অঙ্কে ৯৯, জীবন বিজ্ঞান ও ভৌত বিজ্ঞানে ১০০ করে, ইতিহাসে ৯২, ভূগোলে ৯৮। সৌরদীপের বাবা কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি আরজিএল হাইস্কুলের শিক্ষক গৌরাঙ্গচন্দ্র দাস। মা সোমা দাস গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকেই কোচবিহার শহর লাগোয়া রাজারহাটের বাসিন্দা দাস দম্পতির একমাত্র ছেলে সৌরদীপ মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিত। তৃতীয় শ্রেণী থেকে জেনকিন্স স্কুলে বরাবর ভাল নম্বর পেয়েছে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ৬৫০ নম্বর পায় সে। তারপর থেকে পড়াশোনায় বাড়তি জোর দিয়েছে সৌরদীপ। ওই কৃতীর কথায়, “গড়ে সাত ঘণ্টা করে পড়াশোনা করেছি। ভাল ফল করার লক্ষ্য মাথায় রেখে চেষ্টা চালিয়েছি। তবে একেবারে পর্ষদের সম্ভাব্য মেধা তালিকায় স্থান পাব ভাবিনি। দারুণ আনন্দ হচ্ছে।”

গৌরাঙ্গবাবু ছাড়াও আরও ন’জন গৃহশিক্ষক তাকে সাহায্য করেছে। তবে সব থেকে বেশি ‘গাইড’ করেছেন যিনি, তিনি সৌরদীপের মা সোমাদেবী। ছেলের পড়াশোনার জন্য সব সময় নজর রাখতেন, টিউশনিতে নিয়ে যেতেন। এমনকি রাতে যত ক্ষণ ছেলে পড়াশোনা করত, টিভি বন্ধ করে পাশে থাকতেন। ভবিষ্যতে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চায় সে।

সৌরদীপের সহপাঠী সম্ভাব্য দশম মেহেদ উজ জামানের বাড়ি কোচবিহার শহরের মরাপোড়া চৌপথী লাগোয়া এলাকায়। ছোটবেলা থেকে মেধাবী হিসাবে পরিচিত মেহেদ। টেস্ট পরীক্ষায় ৬৫৭ নম্বর পেয়েছিল সে। এবার মাধ্যমিকে বাংলায় ৯১, ইংরেজিতে ৯৩, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৩, ভূগোলে ৯৭ নম্বর পেয়েছে। দৈনিক গড়ে ৮-১০ ঘন্টা পড়াশোনা করেছে সে। গৃহশিক্ষক ছিল আট জন। পড়াশোনার বাইরে ছবি আঁকা, কবিতা লেখার নেশাও রয়েছে তার। মেহেদের কথায়, “শুধু নম্বরের পেছনে না ছুটে মন দিয়ে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে হবে। এটাই সাফল্যের মন্ত্র। আমি অবশ্য ৬৮০ নম্বর আশা করেছিলাম। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস খাতা পূণর্মূল্যায়নের আবেদন জানাবার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছি।”

মেহেদের বাবা মেহেদুল রহমান পসারিরহাট হাইস্কুলের শিক্ষক। মা রুনা লায়লা গৃহবধূ। বোন মৌসিমা রহমান। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় সে। পড়াশোনায় মেহেদকে বাবা-মা দু’জনেই গাইড করতেন। মা রুনা লায়লা সাংসারিক কাজের ফাঁকে পড়াশোনার খোঁজ রাখতেন রোজ। জেনকিন্স স্কুলের এক শিক্ষক পিন্টু মজুমদার বলেন, “দু’জনের এমন দারুণ সাফল্যেই আমরা খুশি।”

দিনহাটা গোপালনগর এমএসএস হাইস্কুলের মৃগাঙ্ক বসুও সম্ভাব্য দশম স্থানে রয়েছে। বাংলায় ৯১, ইংরেজিতে ৯১, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, অঙ্কে ৯৯, ইতিহাসে ৯৫, ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে সে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে যায় সে। দিনহাটার বোর্ডিং পাড়ার বাসিন্দা মৃগাঙ্কের বাবা মৃণালকান্তি বসু পেশায় ব্যবসায়ী। মা লিপিকা সাহা গৃহবধূ। একমাত্র ছেলের সাফল্যে খুশি দু’জনেই। মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত মৃগাঙ্কের বক্তব্য, ‘‘এতটা সত্যিই এতটা ভাবিনি।’’ মা লিপিকা সাহা বলেন, “সাত জন গৃহশিক্ষক ছিল। সে ভাবে ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করেনি। যখন ইচ্ছে পড়তে বসত। আমি সব সময় ওর দিকেই নজর রাখতাম। স্যারদের কাছে নিয়মিত খোঁজ নিতাম। পরিশ্রমটা কিছুটা সার্থক তো লাগছেই আজ।”

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্কাস আলি, শিক্ষক সত্যজিৎ কার্জি, শঙ্খনাদ আচার্য প্রমুখ সকলেই স্কুলে ওই কৃতীকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন। মিষ্টি বিলিও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE