অঞ্জলিদেবীর সঙ্গে সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামল দাস। (ডান দিকে) জলপাইগুড়িতে আইনজীবীদের সঙ্গে সঙ্গীতার দাদা।—নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ির জিম-মালিক পরিমল সরকারের সঙ্গে পুলিশের একাংশের ঘনিষ্ঠতার কারণেই সঙ্গীতা কুণ্ডু অন্তর্ধান রহস্যের তদন্ত দুমাসেও এগোয়নি বলে সন্দেহ করছেন বাড়ির লোকজন। ইতিমধ্যেই সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী লিখিত ভাবে বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও জানিয়ে দিয়েছেন। অঞ্জলিদেবীর দাবি, পরিমলবাবুর সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের একাংশের সুসম্পর্কের কারণেই সঙ্গীতাকে অপহরণের মামলার তদন্ত এতটুকুও এগোয়নি। তা শোনার পরে পরিবারের লোকজনদের সামনেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচাকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পর্যটন মন্ত্রী।
অন্য দিকে, আগাম জামিনের আবেদন করেও মঙ্গলবার মামলার সওয়াল মুলতুবি রাখার আর্জি জানিয়েছেন অভিযুক্ত পরিমল সরকারের আইনজীবী। তার ফলে এ দিন মামলার শুনানি হয়নি। আগামী ৩ নভেম্বর ফের মামলার শুনানি হবে।
এ দিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা মেয়ে দুমাস ধরে নিখোঁজ হয়ে আছে। অপহরণের অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে একজন অসহায় বৃদ্ধা অভিযোগ করেছেন। এটা উদ্বেগের ব্যাপার। আমি সিপিকে বলেছি, দ্রুত সঙ্গীতার হদিশ করতে হবে।’’ এর পরে মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘পরিমল সরকার প্রভাবশালী কি না, সেটা কোনও বিষয়ই হতে পারে না। যাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠুক না কেন, তা তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। এটাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ।’’
যা শোনার পরে শিলিগুড়ির সিপি জানিয়েছেন, তাঁরা সঙ্গীতাকে খুঁজে বার করার সবরকম চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগও গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে প্রয়োজনে কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সিপি বলেন, ‘‘পর্যটন মন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা সব রকম চেষ্টা করছি। নানা তথ্য মিলছে। তদন্ত চলতে থাকায় সব কিছু প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। তবে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
কিন্তু, গত ১৭ অগস্ট পরিমলবাবুর সংস্থার সেবক রোডের অফিস থেকে সঙ্গীতা নিখোঁজের পর থেকে ভক্তিনগর থানা কল-রেকর্ড ঘেঁটে কোনও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করেনি কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাড়ির লোকজন। বর্তমানে ‘সিট’-এর অফিসাররা অবশ্য কিছু তথ্য পেয়েছেন বলে সিপির দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সঙ্গীতা কুণ্ডুর একটি মোবাইল। কল রেকর্ড ঘেঁটে এমনই জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। তা নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। পরিবারের সদস্যদের একাংশের প্রশ্ন, সঙ্গীতা কী কারও হুমকি বা জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মোবাইল বন্ধ রাখেন, নাকি কেউ তাঁর থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়েছিল?
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে দু’টি মোবাইল ব্যবহার করতেন সঙ্গীতা। গত ১৬ অগস্ট পর্যন্ত একটি মোবাইল খোলা ছিল। অন্য মোবাইলটি দু’দিন আগেই বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল থেকে একাধিক সূত্র মিলতে পারে বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। সেই মোবাইল নম্বরে শেষ কে বা কারা ফোন করেছিল, অথবা কাদের সঙ্গীতা ফোন করেছিলেন, তা জানলে রহস্যের কোনও হদিশ মিলতে পারে বলে দাবি। যদিও, পুলিশ তদন্ত এখনও ঢিমেতালে চলছে বলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি। সূত্র হাতে পেয়েও পুলিশ অনর্থক দেরি করছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
এ দিন, জলপাইগুড়ি আদালতে পরিমলবাবুর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। জেলা আদালতের অবকাশকালীন বিশেষ আদালতে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানির নম্বর আসতেই পরিমলবাবুর আইনজীবী সন্দীপ দত্ত উঠে বিচারক সমীরণ দত্তের কাছে মামলাটির শুনানি মুলতুবি রেখে আরও কিছু সময় চাওয়ার আবেদন করেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। ফলে এ দিন মামলাটির শুনানি হয়নি।
সরকারি তরফে অবশ্য এ দিন আদালতে জানান হয়, মামলার কেস ডায়েরি জমা পড়েছে। যদিও, শুনানি না হওয়ায় তা নিয়ে আদালতে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ তরুণী সঙ্গীতার পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের আইনজীবী অর্ণব সেনগুপ্ত আদালতে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মামলাটির তদন্তকারীও বদলে গিয়েছে জানিয়ে, অর্ণববাবু নতুন তদন্তকারী অফিসারকে আদালতে ডেকে পাঠানোর আবেদন করেন। যদিও, বিচারক জানিয়ে দেন, যেহেতু মামলাটির শুনানি এ দিন হল না, সে কারণে আদালতের পক্ষে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। অর্ণববাবুকে বিচারক বলেন, ‘‘আগাম জামিনের আবেদন তো এ দিন হল না, সুতরাং আপনাদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। যে দিন মামলার শুনানি হবে সে দিন বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাবেন।’’
কেন আগাম জামিনের আবেদন না জানিয়ে সময় চাওয়া হল, তার ব্যখ্যায় সঙ্গীতা নিঁখোজ মামলাটির তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের যুক্তি দিয়েছেন। আইনজীবী সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘‘মামলাটির তদন্তকারী বদলে গিয়েছে। পৃথক তদন্ত দল হয়েছে। তদন্তকের অগ্রগতি দেখার জন্যই অপেক্ষা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy