Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চোখ বন্ধ করলেই মেয়েকে দেখছেন মা

দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শরীর। রাতে ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে মেয়ের মুখের ছবি। ‘মেয়ে কোথায় আছেন, কেমন আছে? এই ভাবনাতেই সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন অঞ্জলিদেবী। তেমন কারও সঙ্গে দেখা হলেই জানতে চান, “পুলিশ কবে নাগাদ মেয়ের খোঁজ জানাতে পারবেন?

সঙ্গীতার মা অ়ঞ্জলিদেবী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

সঙ্গীতার মা অ়ঞ্জলিদেবী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নমিতেশ ঘোষ
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শরীর। রাতে ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে মেয়ের মুখের ছবি। ‘মেয়ে কোথায় আছেন, কেমন আছে? এই ভাবনাতেই সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন অঞ্জলিদেবী। তেমন কারও সঙ্গে দেখা হলেই জানতে চান, “পুলিশ কবে নাগাদ মেয়ের খোঁজ জানাতে পারবেন? কেন এত দেরি হচ্ছে।” সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “পরিমল সরকারই সব জানে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মিলবে মেয়ের খোঁজ।” তবে পরিমলবাবু গোড়া থেকেই দাবি করছেন, তাঁর দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকলেও ওই তরুণীর নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

এই প্রসঙ্গে অঞ্জলিদেবীর সংযোজন, ‘‘আমার মেয়ে পরিমলের ওখানে চাকরি করত। ওর দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকত। ও নাকি বাজার করে দিত। তাই কিছু জানে না বললে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। পুলিশ চাইলে রহস্যের সমাধান করতে পারে।’’

মেয়ে সঙ্গীতা কুণ্ডুর নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে জীবনটাই যেন পাল্টে গিয়েছে শিলিগুড়ির শান্তিনগরের বাসিন্দা অঞ্জলিদেবীর। দিন-রাত সবসময় কষ্ট বুক চেপে বসে থাকেন তিনি। কেউ সঙ্গীতার কথা তুললেই ছলছল হয়ে ওঠে তাঁর চোখ। বলেন, “অনেক দিন ধরেই ঘুমের সমস্যা। এখন তো রাতে ঘুমের ওষুধ খেলেও ঘুম আসে না।” সারাক্ষণ মেয়ের কথাই ভাবতে থাকেন তিনি। জানালেন, মেয়ে মাঝে মধ্যে বিকেলের দিকে বাড়িতে যেতেন। কখনও ফল নিয়ে যেতেন। কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ফিরে যেতেন। প্রায় প্রতি রাতেই ফোন করে খোঁজ নিতেন তাঁর। মায়ের শরীর নিয়ে চিন্তিত থাকতেন সঙ্গীতা। তিনি বলেন, “মেয়েটা আমার কাছে থাকত না। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ফোন করে খোঁজ নিত আমার। শরীর ভাল আছে কি না জিজ্ঞাসা করত। এখনও রাতে মনে হয় মেয়ে ফোন করবে। অপেক্ষাও করি। কিন্তু এখনও কোনও ফোন আসেনি।” মাস তিনেক আগে একদিন মেয়ের সেবক রোডের ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন তিনি। হাতে সময় না থাকায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন।

শিলিগুড়ির সেবক রোডের জিম-মালিক পরিমলবাবুর অফিসের কর্মী ছিলেন সঙ্গীতা। গত ১৭ অগস্ট সেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই জিমের বেশ কয়েকজন কর্মীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সঙ্গীতাদেবীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। দিন-দুয়েক আগে তাঁকে এবং বড় ছেলে শম্ভুবাবুকে ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। বেশ কয়েকজনের নাম জানিয়ে তাঁদেরকে অঞ্জলিদেবীরা চেনেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সঙ্গীতার এক দিদি কলকাতায় থাকেন। তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE