Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রায়গঞ্জ হাসপাতাল

সাফাইয়ের দায়িত্ব ছাড়ল পুরসভা

সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর দাবিতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন পুরসভা নিযুক্ত অস্থায়ী সাফাইকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর দাবিতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন পুরসভা নিযুক্ত অস্থায়ী সাফাইকর্মীরা। গত তিনদিন ধরে হাসপাতাল ও পুর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও সাফাইকর্মীরা কাজে যোগ দেননি। এই পরিস্থিতিতে এ বারে হাসপাতালে সাফাইয়ের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নিল পুরসভা।

বৃহস্পতিবার পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের চিঠি দিয়ে পুরসভার তরফে হাসপাতালে সাফাইয়ের দায়িত্ব প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। পুর কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের জেরে কর্মহীন হয়ে পড়লেন ২৬ জন সাফাইকর্মী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অধীনে তাঁদের পুনর্নিয়োগ করার জন্য এ দিন থেকে হাসপাতাল সুপারের চেম্বারের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁরা।

হাসপাতাল সুপার অনুপ হাজরা জানান, পুরসভা নিযুক্ত সাফাইকর্মীরা গত তিনদিন ধরে সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় হাসপাতালের নিজস্ব কয়েকজন সাফাইকর্মীর তরফে গোটা চত্বর সাফসুতরো রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি বলেন,‘‘এখন পুরসভা সাফাইয়ের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সমস্যা জটিল আকার ধারণ করল। আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।’’

পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিতবাবুর দাবি, খুব দ্রুত বোর্ড অব কাউন্সিলরের বৈঠক ডেকে সরকারি নিয়মে বেতন বাড়ানো হবে বলে গত কয়েকদিন ধরে সাফাইকর্মীদের একাধিকবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাফাইকর্মীরা মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে হাসপাতালে সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এতে পুরসভার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছিল। তাই পুরসভার তরফে সরকারিভাবে হাসপাতালে সাফাইয়ের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ওই ২৬ জন সাফাইকর্মীর সঙ্গে পুরসভার কোনও সম্পর্ক নেই।

হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ড ও বারান্দা সর্বক্ষণ সাফসুতরো রাখতে জেলা প্রশাসনের অনুরোধে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে হাসপাতাল সাফাইয়ের দায়িত্ব নেয় রায়গঞ্জ পুরসভা। সেই থেকে পুরসভার ২৬ জন সাফাইকর্মী প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের বিভিন্ন ওয়ার্ড, জরুরি ও বহির্বিভাগ সহ হাসপাতালের করিডর সাফাইয়ের কাজ করতেন। হাসপাতালের প্রশিক্ষিত ১২ জন সাফাইকর্মী তিনটি অপারেশন থিয়েটারের সর্বক্ষণ হাজির থেকে সাফাইয়ের কাজ করেন।

গত শনিবার পুরসভা নিযুক্ত হাসপাতালের সাফাইকর্মীরা পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লিখে সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর দাবি জানান। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে তাঁদের কোনও স্পষ্ট আশ্বাস না দেওয়ায় মঙ্গলবার থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতাল সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেন। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের নিজস্ব ওই ১২ জন সাফাইকর্মীর পক্ষে গোটা হাসপাতাল চত্বর সাফসুতরো রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।

গত বুধবার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অমল আচার্য আন্দোলনকারী সাফাইকর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা কাজে যোগ দেননি। সাফাইকর্মীদের তরফে বিজু জমাদারের দাবি, পুরসভা তাঁদের বর্তমানে দৈনিক ১৬৯ টাকা মজুরির হিসেবে প্রতিমাসে ৫ হাজার ৭০ টাকা বেতন দেয়। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাফাইকর্মীদের প্রতি মাসে ৬ হাজার ৬২৫ টাকা বেতন নির্ধারিত করলেও গত দেড় বছর ধরে পুরসভা সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সাফাইকর্মীদের বেতন বাড়ায়নি। বিজুবাবুর কথায়, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষকে আমরা গত এক বছর ধরে বার বার আবেদন নিবেদন করলেও সরকারি নিয়মে বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। আমরা কখওনই পুরসভার কাছে মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতন দাবি করিনি। পুরসভার অধীনে আমরা আর কাজ করতে চাই না।’’ তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অধীনে পুনর্নিয়োগ করার দাবিতে সাফাইকর্মীদের বিক্ষোভ চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE